প্রায় প্রতিটি মানুষই জীবনের কোনো না কোনো সময় অ্যালার্জির সমস্যায় ভুগেছেন অথবা শুনেছেন। অনেকেই বলে থাকেন, গরুর মাংস খেয়ে শরীর চুলকাচ্ছে বা কোনো খাবার খেয়ে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ইত্যাদি। কিন্তু তারা নির্দিষ্ট ‘তালিকা’ ধরে বলতে পারেন না কোন কোন বস্তু বা খাবারে তাদের শরীর এরকম প্রতিক্রিয়া দেখায়।
কারণ শুধু খাবার নয়, কোনো কোনো ওষুধ, ধুলাবালি, পোকামাকড় ইত্যাদি থেকেও এরকম প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর কারণ হলো অ্যালার্জি।
অ্যালার্জির লক্ষণ ও উপসর্গ
অনবরত হাঁচি, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, কারও কারও চোখ দিয়েও পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়। কারও শরীর চুলকায়। কারও শ্বাসকষ্ট হয়। এমনকি তীব্র এলার্জি প্রতিক্রিয়া হয়ে শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে মৃত্যুও হতে পারে যদি দ্রুত চিকিৎসা না পেয়ে থাকে।
অ্যালার্জি কেন হয়
প্রতিটি মানুষের দেহের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্বতন্ত্র। শরীরে যখন বাইরের ‘অচেনা’ কিছু প্রবেশ করে, তখন শরীর সেটাকে ‘শত্রু’ ধরে নিয়ে প্রতিরক্ষামূলক কিছু ঘটনা ঘটানো শুরু করে দেয়।
অনেক সময় শরীর ভুল বস্তুকে শত্রু ভেবে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া শুরু করে। তখন ওই ধরনের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয় এবং তাকে অ্যালার্জি বলা হয়। অ্যালার্জিকে মেডিকেল পরিভাষায় বলা হয় টাইপ ওয়ান হাইপারসেনসিটিভিটি এবং যেসব বস্তু অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তাদেরকে বলে অ্যালার্জেন।
সতর্ক থাকতে যে টেস্টটি করতে হবে
কোনো কোনো বস্তুর প্রতি অ্যালার্জি আছে সেটা জানার জন্য একটা টেস্ট হচ্ছে হাইপারসেনসিটিভিটি টেস্ট। আর এই টেস্টের একটা ধরন হচ্ছে স্কিন প্রিক টেস্ট।
এই পরীক্ষাটি করার সময় শরীরের চামড়ায় ছোট্ট সূঁচ দিয়ে বিভিন্ন বস্তু সামান্য পরিমাণে প্রবেশ করানো হয় এবং চামড়ায় প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় যে কোনো কোনো বস্তু তার শরীরে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
টেস্ট রিপোর্ট পাওয়ার পর করণীয়
এই টেস্টের রিপোর্টে যেসব খাবার বা বস্তুর প্রতি আপনার শরীর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেসবের তালিকা দেওয়া থাকবে। শুধু সেসব খাবার বা বস্তু এড়িয়ে চললেই আপনি নিরাপদ থাকতে পারবেন।
এছাড়াও ফার্মেসিতে ওভার-দা-কাউন্টার অ্যান্টি-হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ কিনতে পাওয়া যায়। সামান্য অ্যালার্জির ক্ষেত্রে সেসব ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ভুল করে যদি অ্যালার্জিক খাবার বা ওষুধ খেয়ে তীব্র শ্বাসকষ্ট, মুখ ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি প্রতিক্রিয়া শুরু হয়, তাহলে জীবন বাঁচানোর জন্য যত দ্রুত সম্ভব তাকে হাসপাতালে বা অন্তত রেজিস্টার্ড এমবিবিএস ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে যেতে হবে।
লেখক :
ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল
অধ্যাপক, চর্ম যৌন এলার্জি ও চুল রোগ বিশেষজ্ঞ