দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেল এক মাসে মারা গেছে ৯৩৫ জন। আর এই এক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে সীমান্তবর্তী বিভাগ রাজশাহী। যেখানে এখন করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীই বেশি। তবে ঠিক কতজন বা কত শতাংশ ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এমন কোনো তথ্য এখনো বের করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট গবেষণাপ্রতিষ্ঠান। তবে কেউ কেউ ধারণা দিয়ে বলছেন, যদি ৮০ শতাংশই ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে থাকে তবে মৃত্যুর ওপরও এ হারেই প্রভাব পড়ার কথা। এর মধ্যে কয়েক দিন ধরেই এককভাবে সর্বোচ্চ মৃত্যু ঘটছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘আমাদের এখানে এখনো জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কোনো সুবিধা নেই। আমরা যাদের করোনা পজিটিভ তাদের কিছু নমুনা ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠিয়ে দিই। তারা সেখানে গবেষণা করে এরই মধ্যে জানিয়েছে, ৮০ শতাংশের মধ্যেই ডেল্টা ভেরিয়েন্ট রয়েছে। কিন্তু এরপর আমরা আর জানতে পারি না ঠিক কোন কোন রোগী বা কার কার নমুনায় ওই ভেরিয়েন্ট রয়েছে। ফলে যারা মারা যাচ্ছে তাদের মধ্যে কে কে ওই ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত ছিল, সেটাও আমরা বুঝতে পারছি না।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ধারণা করছি, যেহেতু আমাদের এই এলাকাগুলোতে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট বেশি রয়েছে তাই আক্রান্তদের মধ্যে যাদের জটিল পরিণতি হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাদের বেশির ভাগই হয়তো ডেল্টা ভেরিয়েন্টই হবে।’
একই কথা বললেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর। তিনি বলেন, প্রতিটি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা সম্ভব নয়। আর যখন এই একটি ভেরিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ ঘটে যায়, তখন ওই এলাকায় যারা আক্রান্ত এবং মারা যাচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই ওই একই ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত বলেই ধরে নেওয়া যায় বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতেই।
গেল এক মাসের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৯ মে পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১১ হাজার ৯৩৪ জন। গতকাল সোমবার পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৮৬৯ জনে। অর্থাৎ এই এক মাসে মারা গেছেন ৯৩৫ জন। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মৃত্যুর হার রাজশাহীতে ১৪.৩০ শতাংশ (৬২৩ জন থেকে ৭২৭ জন), সিলেটে ১৩.৬২ শতাংশ (৪১২ থেকে ৪৭৭), খুলনায় ১১.৪৭ শতাংশ (৭২৫ থেকে ৮১৯), রংপুরে ১১.৬ শতাংশ (৪৩৪ থেকে ৪৮৮), চট্টগ্রামে ১০.৪৯ শতাংশ (২২০৯ থেকে ২৪৬৮), বরিশালে ৬.৯৪ শতাংশ (৩৬২ থেকে ৩৮৯), ময়মনসিংহে ৬.৭৯ শতাংশ (২৪৭ থেকে ২৬৫) এবং সবচেয়ে কম ঢাকায় ৪.৩৩ শতাংশ (৬৯২২ জন থেকে ৭২৩৬ জন)। যদিও সংখ্যার হিসাবে ৯৩৫ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩১৪ জন ঢাকায়, ২৫৯ জন চট্টগ্রামে, ১০৪ জন রাজশাহীতে, ৯৪ জন খুলনায়, ৬৫ জন সিলেটে, ৫৪ জন রংপুরে, ২৭ জন বরিশালে ও ১৮ জন ময়মনসিংহে মারা গেছে। আর বয়স বিবেচনায় দেশে মৃত্যুহারের ক্ষেত্রে কোনো হেরফের ঘটছে না বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের তথ্য অনুসারে মৃত্যুহার আগের মতোই। এখনো সর্বোচ্চ মৃত্যুঝুঁকিতে পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষ। আবার আক্রান্তের ক্ষেত্রে এখনো আগের মতোই তরুণদের মধ্যে সংক্রমণ বেশি। ১৫-৪৫ বছরের মানুষরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, যাদের মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ২৫-৩৪ বছরের মধ্যে।
সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে করোনায় এ পর্যন্ত মোট মৃতদের ৮১ শতাংশই ৫০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ। এমনকি গতকাল যে ৩০ জন মারা গেছেন তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশই পঞ্চাশোর্ধ্ব (২৪ জন), অন্য ছয়জনের বয়স ৩১-৫০ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া মোট মৃতদের মধ্যে ১০ বছরের নিচের শিশুদের মৃত্যু ০.৩৯ শতাংশ, ১১-২০ বছরের ০.৬৪ শতাংশ, ২১-৩০ বছরের ১.৮১ শতাংশ, ৩১-৪০ বছরের ৫.০৩ শতাংশ এবং ৪১-৫০ বছরের ১১.১৩ শতাংশ।