‘সুস্থ শরীর, সুন্দর মন’- মানবজীবনের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত। শুধু বেশি বেশি শারীরিক সুস্থতার প্রতি আমাদের স্বভাবজাত সচেতনতা থাকলেও, মানসিক স্বাস্থ্যের বেলায় অধিকাংশ সময় থাকে অবহেলিত। আবার মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সুনজর থাকলেও অনেক সময় পরিবেশগত বৈরিতা ও অপ্রতিরোধ্য রোগের আক্রমণে দেহঘড়ি হয়ে পড়ে নাকাল। তাই শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও সমানভাবে জরুরি এবং সুস্থ দেহের জন্য সুন্দর মন জরুরি। শরীর ভালো থাকলে যেমন কাজের স্পৃহা বাড়ে, তেমনি মনও থাকে ফুরফুরে ও সতেজ।
স্বাস্থ্য-সুরক্ষার ক্ষেত্রে আমরা রোগের চিকিৎসায় বিশ্বাসী- অর্থাৎ কিছু হলেই সেটা নিবারণে উঠেপড়ে লাগি।
দাঁত থাকতে দাঁতের মূল্য না বোঝা আমাদের মজ্জাগত। কিন্তু একটু সচেতন হয়ে যদি হাতেগোনা গুটিকয়েক নিয়ম মেনে রোগ প্রতিরোধে সচেষ্ট হই, তবেই জীবনকে আমরা সত্যি সুস্থ-সুন্দর রাখতে পারি। একেবারে ফিট থাকতে গেলে আমাদের কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে।
সুস্থ থাকার কিছু সূত্র :
সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত ও পরিমিত ঘুম প্রয়োজন। দিবানিদ্রার অভ্যাস কমিয়ে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রতিদিন ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘুমের অভ্যাস ভালো। ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস সুস্বাস্থ্যের সহায়ক। সকালে স্কুল-কলেজ বা অফিসে যাওয়ার আগে গোসল সেরে নিন। প্রতিদিন সমতল জায়গায় হাঁটার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন হাঁটা সর্বোত্কৃষ্ট ব্যায়াম। নিয়মিত অন্তত ৩০ মিনিট থেকে ঘণ্টাখানেক হাঁটার অভ্যাস করুন। যাদের মেদ-ভুঁড়ি আছে, তারা নিয়মিত ও সঠিক ব্যায়াম করতে পারেন। এর জন্য একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে। মনে রাখবেন ভুল ব্যায়াম ও অনিয়ন্ত্রিত ‘জিম এক্সারসাইজ’ আপনার সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। নিয়মিত ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। খাবার তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার বাড়ান। আমিষ ও চর্বিজাতীয় খাবার কমিয়ে আনুন। ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। লাল মাংস (চার পা বিশিষ্ট পশুর মাংস), মিষ্টি, ঘি, ডালডা, চর্বি জাতীয় খাদ্য কম খান। ফলমূল ও শাকসবজি বেশি করে খাদ্য তালিকায় রাখুন। একবারে বেশি করে খাওয়ার চেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খেতে পারেন। যাদের শরীরের ওজন বেশি তারা খাবার গ্রহণের আগে শসা, টমেটোসহ সালাদ জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন, এতে খাবারের পরিমাণ কম লাগবে। খাবার সময় মাঝে মাঝে পানি পান না করে শেষে অন্তত আধা ঘণ্টা পর পানি পান করবেন। ধূমপান, তামাকজাত দ্রব্য, এলকোহল এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্য পরিহার করুন।
মোবাইল, ফেসবুক, ইন্টারনেট ব্যবহারে সংযত হোন। এতে শারীরিক অলসতা যেমনি তেমনি মানসিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করুন। স্ত্রী-পুত্র, বাবা-মাকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করুন। তাদেরও শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। কাজে ব্যস্ত থাকাটা শরীর ও মন দুয়ের পক্ষে ভালো। পেশাগত কোনো সমস্যা থাকলে সে সমস্যাকে জিইয়ে না রেখে তা মেটানোর চেষ্টা করুন। পজিটিভ চিন্তা করুন, বই পড়ুন। কোনো শখ গড়ে তুলুন, নতুন কিছু করুন। অতিরিক্ত টেনশন, বিষণ্নতা, মানসিক চিন্তা পরিহার করুন ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন এবং সুকর্মে সক্রিয় থাকুন। নিজের কাছে সৎ থাকুন। নিজ নিজ ধর্মীয় চর্চায় মনোনিবেশ করুন। সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করুন, নিজের ওপর ভরসা রাখুন। কথার ওপরে সংযম রাখুন। আপনার কথায় কেউ যেন মানসিক দুঃখ না পায়। সেটা মাথায় রেখে কথা বলুন। তাই এসব বিষয়ে আরও সচেতন হোন।
লেখক :
অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ
ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক।