নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে স্বাস্থ্য খাতে অনিয়মের কেনাকাটার বিল পরিশোধে রাজি হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জরুরি ভিত্তিতে কেনা ৫৭টি প্যাকেজে ৩৪৩ কোটি ২৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকার স্বাস্থ্যসামগ্রীর ক্ষেত্রে নজিরবিহীন সব অনিয়ম হয়। সরবরাহকারীদের ওই টাকা পরিশোধ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়কে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় ওই বিল পরিশোধ বাবদ করোনা তহবিল থেকে পুরো টাকাই বরাদ্দ দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যসামগ্রী কেনাকাটার অর্থ ছাড়ে আরো কঠোর হবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সূত্র মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জরুরি ভিত্তিতে ডিপিএম পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৬টি প্যাকেজে এক হাজার ২৮৫ কোটি ২২ লাখ ৪১ হাজার টাকার স্বাস্থ্যসামগ্রী কেনা হয়। এর মধ্যে ৩৪৩ কোটি ২৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকার ৫৭টি প্যাকেজে ঘটে নজিরবিহীন অনিয়ম। অনিয়ম অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটি দেখেছে, এসব প্যাকেজ কেনায় প্রযোজ্য যথাযথ ক্রয় অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। কোনো সরবরাহ চুক্তি করা হয়নি। পণ্যের তালিকা থাকলেও নির্ধারিত কোনো একক মূল্য ও মোট মূল্য উল্লেখ করা হয়নি। কোনো শর্ত যুক্ত করা হয়নি। এ ছাড়া নানা ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০টি অনিয়ম পাওয়া যায়।
যেসব প্রতিষ্ঠান এসব প্যাকেজ সরবরাহ করেছে, তারা অর্থ পরিশোধে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে (সিএমএসডি) বিভিন্ন মাধ্যমে ক্রমাগত চাপ দিয়েছে। এসব চাপের কারণে সিএমএসডি বিল পরিশোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চলতি মাসের ৪ তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অপ্রত্যাশিত খাত থেকে অথবা করোনা তহবিল থেকে বিল পরিশোধে চিঠি দেয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পেয়ে জনগণের করের টাকায় অনিয়মের বিল পরিশোধে অর্থ মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিতে মাত্র সাত দিন সময় নিয়েছে।
গত ১২ তারিখ বিল পরিশোধের বরাদ্দ দিয়ে অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ-১ থেকে আদেশ জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে কভিড-১৯ মোকাবেলায় সিএমএসডির সংগৃহীত মালপত্রের বিল পরিশোধ বাবদ ৩৪৩ কোটি ২৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা অর্থ বিভাগের বাজেটে ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় তহবিল’ থেকে সিএমএসডির অনুকূলে ‘চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ’ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হলো। তবে এতে কিছু শর্ত দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
শর্তগুলো হচ্ছে, অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে দ্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৬ ও দ্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ অনুসরণসহ সব আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। ক্রয়প্রক্রিয়ায় ঠিকাদারের সুবিধাভোগী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ ও তা নিরীক্ষার জন্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। এই অর্থ প্রস্তাবিত খাত ছাড়া অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না। এই বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সমন্বয় করতে হবে।