দোষীদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করুন
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেনাকাটায় ২১টি আর্থিক অনিয়ম চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, যার মধ্যে ২০টিই গুরুতর।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষায় ধরা পড়েছে, হাসপাতালটির ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬৮ কোটি টাকার এমএসআর (মেডিকেল সার্জিক্যাল রিকুজিট) ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি (রাজস্ব) কেনায় এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে।
উদ্বেগজনক হলো, দেশে দুর্নীতিবাজ, স্বেচ্ছাচারী ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে দুর্নীতির শক্তিশালী বলয় তৈরি হয়েছে, যারা সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ওষুধ, সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় স্বাস্থ্য খাতে জনসাধারণের জন্য বরাদ্দ সরকারি বাজেটের ৭০-৮০ ভাগই হাতিয়ে নিচ্ছে।
বস্তুত তাদের দুর্নীতির কারণেই প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্য খাতের এ অরাজকতা রোধে সরকারের শক্ত ভূমিকা গ্রহণ করা জরুরি।
স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির যেসব তথ্য সময়ে-সময়ে উদঘাটিত হচ্ছে, তা এক কথায় ভয়াবহ। দেশে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলোর অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত- এটি আজ প্রমাণিত। বলা চলে, তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সর্বত্রই চলছে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিযোগিতা।
স্বাস্থ্য খাতে সব ধরনের কেনাকাটা, নিয়োগ, পদায়ন, বদলিসহ এমন কোনো কাজ নাকি নেই, যেখানে দুর্নীতি হয় না। একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের সমন্বয়ে স্বাস্থ্য খাত ঘিরে অপ্রতিরোধ্য যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, সর্বত্র তাদের সরব পদচারণা লক্ষ করা যায়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিএমএসডি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং নার্সিং অধিদপ্তর ছাড়াও প্রতিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, স্বাস্থ্য বিভাগীয় অফিস এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ সব স্বাস্থ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে সিন্ডিকেটের লোকজন।
স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন একসূত্রে গাঁথা। সরকার স্বাস্থ্য খাতকে প্রাধান্য দিয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিক্ষা, মাতৃস্বাস্থ্যসেবা, শিশুমৃত্যু হ্রাস ও পরিবার পরিকল্পনাসহ অন্যান্য কর্মসূচি পরিচালনা করলেও দেখা যাচ্ছে- সরকার যেভাবে চিন্তা করছে; বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটছে না। এর অন্যতম কারণ স্বাস্থ্য খাতে বিরাজমান দুর্নীতি।
বস্তুত দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গড়ে তুলেছে সম্পদের পাহাড়। সরকারি হাসপাতালে কেনাকাটাসহ স্বাস্থ্য খাতে লুটপাট ও দুর্নীতির যে রাজত্ব কায়েম হয়েছে; দ্রুত তার মূলোৎপাটন করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।