সম্প্রতি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল, ল্যাবএইড হাসপাতাল ও জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনায় বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনায় নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দেশজুড়ে অন্তত : ১২শ’টি বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিবন্ধন নেই উল্লেখ করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনায় নতুন করে দশটি শর্ত আরোপ করেছে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে অ্যানেস্থেশিস্ট না থাকলে কোনো হাসপাতাল রোগীর অপারেশন করতে পারবে না। হাসপাতালের নিবন্ধন নম্বর অবশ্যই হাসপাতালের প্রবেশমুখে টাঙিয়ে রাখতে হবে।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেনের নির্দেশে জারিকৃত ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) কর্তৃক স্বাক্ষরিত নতুন এ আদেশ জারি করা হয়েছে। বেসরকারি মেডিক্যাল/ ক্লিনিক/ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পালনীয় শর্তাবলি হলো, বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকের লাইসেন্সের কপি ওই প্রতিষ্ঠানের মূল প্রবেশপথের সামনে দৃশ্যমান স্থানে অবশ্যই স্থায়ীভাবে প্রদর্শন করতে হবে, সব বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্যাদি সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য ০১ (এক) জন নির্ধারিত দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা/কর্মচারী থাকতে হবে এবং তার ছবি ও মোবাইল নম্বর দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে, যে সব প্রতিষ্ঠানের নাম ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল হিসেবে আছে কিন্তু শুধু ডায়াগনস্টিক অথবা হাসপাতালের লাইসেন্স রয়েছে তারা লাইসেন্স ব্যতিরেকে কোনোভাবেই নামে উল্লেখিত সেবা প্রদান করতে পারবে না, ডায়াগনস্টিক সেন্টার/ প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি এর ক্ষেত্রে যে ক্যাটারগরিতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত শুধু সে ক্যাটাগরিতে নির্ধারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যতীত কোনোভাবেই অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে না এবং ক্যাটারগরি অনুযায়ী প্যাথলজি/ মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও রেডিওলজি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে, বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতালের ক্ষেত্রে লাইসেন্সের প্রকারভেদ ও শয্যা সংখ্যা অনুযায়ী সব শর্তাবলি বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, হাসপাতাল/ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিযোজিত সব চিকিৎসকের পেশাগত ডিগ্রির সনদ, বিএমডিসির হালনাগাদ নিবন্ধন ও নিয়োগপত্রের কপি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে, হাসপাতাল/ ক্লিনিক এর ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের অপারেশন/ সার্জারি/প্রসিডিউর এর জন্য অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসককে সার্জনের সহকারী হিসেবে রাখতে হবে, কোনো অবস্থাতেই লাইসেন্সপ্রাপ্ত/ নিবন্ধিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক ব্যতীত চেম্বারে অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেসথেশিয়া প্রদান করা যাবে না। বিএমডিসি স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ অবেদনবিদ ছাড়া যে কোনো ধরনের অপারেশন/সার্জারি/ ইন্টারভেনশনাল প্রসিডিউর করা যাবে না, সকল বেসরকারি নিবন্ধিত/ লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল/ ক্লিনিকে লেবার রুম প্রোটোকল অবশ্যই মেনে চলতে হবে এবং নিবন্ধিত/ লাইসেন্স প্রাপ্ত হাসপাতাল/ ক্লিনিকে অপারেশন থিয়েটারে অবশ্যই অপারেশন থিয়েটার এটিকেট মেনে চলতে হবে।
এদিন গাজীপুরের রাজন্দ্রপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট কর্তৃক আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, এখন থেকে সরকারের নির্দিষ্ট শর্ত মেনে বেসরকারি মেডিক্যাল/ ক্লিনিক/ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালাতে হবে।
এর কারণ, আমরা লক্ষ্য করছি, কিছু অসাধু মানুষ সরকারের কোনো রকম নিয়মের তোয়াক্কা না করে শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থের জন্য যত্রতত্র নামমাত্র হাসপাতাল/ক্লিনিক/ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। নিয়মের বাইরে গিয়ে এগুলো আর চলতে পারবে না। এখনো ১২শ’টির ওপর প্রাইভেট স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিবন্ধন নাই। এদের কাছে ভালো ডাক্তার নাই, নার্স নাই, টেকনিশিয়ান নাই। তা হলে এরা হাসপাতাল চালাচ্ছে কী দিয়ে? এরা রোগী পাচ্ছে কীভাবে?
এগুলো আমাদের ভাবতে হবে। আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, এ রকম অনিবন্ধিত সকল স্বাস্থ্যকেন্দ্র দ্রুত বন্ধ করা হবে। আর, আজকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরিচালক (প্রশাসন) কর্তৃক স্বাক্ষরিত দশটি বিশেষ নির্দেশনাসহ একটি অফিস আদেশ করে দিয়েছি। এই অফিস আদেশ প্রত্যেকটি প্রাইভেট মেডিকেল/ক্লিনিক/ ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে অবশ্যই মেনে হাসপাতাল চালাতে হবে। এটির অমান্য হলেই নিবন্ধন বাতিলসহ কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে।