হেপাটাইটিসের বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে লিভারের প্রদাহ। প্রদাহ মানে লিভার যদি কোনো কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তখন লিভারে কিছুটা পরিবর্তন হয়। এর ফলে লিভারের ওই জায়গায় কিছুটা লাল হয়ে যায়, ফুলে যায়, লিভারে ব্যথা হয়। এতে লিভার ফাংশন ব্যাহত হয়। লিভারের প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন হওয়ার কারণে এ রকম হয়।
এ ব্যাপারে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক এবং পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন বিস্তারিত তথ্য।
লিভারে প্রদাহ বা হেপাটাইটিসের প্রধান কারণ হচ্ছে ভাইরাস। যেমন- ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ এবং ‘ডি’- এই ভাইরাসগুলো লিভারে প্রদাহের ভাইরাস। এগুলো লিভারকে আক্রমণ করে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এছাড়া আরও কিছু কারণ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে ফ্যাটি লিভার। লিভারে যদি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি জমে, তখনো লিভার ফাংশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কোনো ভাইরাস দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ করে। এই দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ ‘বি’ এবং ‘সি’ ভাইরাস থেকে হয়। দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ যখন হয়, তখনই সিরোসিস হয়। আর সিরোসিস যাদের হয়, তাদের মধ্যে কিছু শতাংশ রোগীর লিভার ক্যান্সার হয়। সুতরাং লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ হলো আমাদের দেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস।
কিছু কিছু রোগীর লিভার ক্যান্সার হয় ‘সি’ ভাইরাসে। এছাড়া আরও অন্য যে সাধারণ কারণ রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ফ্যাটি লিভার। যাদের দীর্ঘমেয়াদি ‘বি’ এবং ‘সি’ ভাইরাস সংক্রমণ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ শতাংশের লিভার সিরোসিস হয়। এদের মধ্যে বছরে ৫ শতাংশ লোকের লিভার ক্যান্সার হয়।
আবার অনেক সময় ‘বি’ ভাইরাসের রোগীদেরও সরাসরি ‘সি’ ভাইরাস না হয়ে লিভার ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে। যাদের শরীরে ‘বি’ এবং ‘সি’ ভাইরাস ছয় মাসের বেশি থাকে, তাদের মধ্যে অল্পকিছু শতাংশ লোকের লিভার ক্যান্সার হয়।
বাচ্চা বয়সে বা শিশুকালে যাদের ‘বি’ ভাইরাস হয়, তাদের মধ্যে লিভার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। বাচ্চাদের মধ্যে যাদের ‘বি’ ভাইরাস ইনফেকশন হয়, তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশের দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যাদের ‘বি’ ভাইরাস ইনফেকশন হয়, তাদের মধ্যে ৫ শতাংশেরও কম দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বাচ্চা বয়সে যাদের শরীরে ‘বি’ ভাইরাসের জীবাণু প্রবেশ করে, সেক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত ভয়াবহ। অন্যদিকে প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ‘বি’ ভাইরাস ইনফেকশন হওয়ার পর লিভার সিরোসিস বা ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম।