হ্যান্ড-ফুট-মাউথ’ একেবারে জটিল কোনো রোগ নয়। তবে প্রচণ্ড ছোঁয়াচে। সাধারণত এক বা দেড় বছর বয়স থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের এ রোগ হয়। তবে তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সীদের এ রোগ বেশি হয়। কক্সস্যাকিভাইরাস নামে একটি ভাইরাসের প্রভাবে এ রোগ হয়। পরিবারের কোনো শিশুর এ রোগ হলে তার থেকে অন্য শিশুদের আলাদা রাখা বাঞ্চনীয়।
প্রাথমিকভাবে জ্বর হয়। সাধারনত শিশুর জ্বর দুই দিনের বেশি থাকে না। আবার অনেকের জ্বর নাও হতে পারে। আবার কারও জ্বর বাড়তেও পারে। এরপর হাতে, পায়ের পাতায়, কনুই ও হাঁটুতে ফুসকুড়ি হয়। অনেক শিশুর মুখের ভেতরেও ফুসকুড়ি হয়। এগুলো দেখতে চিকেন পক্সের মতো অনেকটা।
দেখলে মনে হয়, এসব ফুসকুড়ির মধ্যে ঘোলা পানি জমেছে। তবে ফোসকা কমতে ছয় দিন বা তার বেশি সময় লাড়তে পারে। মুখ গহ্বরে ফোসকা হলেই শিশুদের বেশি কষ্ট হয়। এ সময়টাতে শিশুদের খেতে অসুবিধা হয়। খাবার গিলতে ব্যথা লাগে।
কোন সময় এ রোগ বেশি হয়, সুরক্ষার উপায় কী
সাধারণত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এ রোগ হয়। বর্ষা মৌসুমেই এর প্রকোপ বাড়ে। টানা বৃষ্টি হলেও এ রোগের সংক্রমন হতে পারে। এ বছর রোগটির হার বেশি, বিশেষ করে রাজধানীতে। তবে দেশের অন্য স্থানেও এটি ছড়ানোর আশঙ্কা আছে।
হ্যান্ড-ফুট-মাউথ যেহেতু ছোঁয়াচে রোগ, তাই কোনো শিশু এতে আক্রান্ত হলে তাকে অবশ্যই স্কুলে দেওয়া যাবে না। পরিবারের মধ্যেও একধরনের আইসোলেশনে তাকে রাখতে হবে। ছোঁয়াচে রোগ সাধারণত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। এ ছাড়া শরীরে হওয়া ফুসকুড়িগুলো ফেটে গেলে সেখানকার রস থেকে ছড়াতে পারে। বাড়ির অন্য শিশুরা যাতে আক্রান্ত না হতে পারে, সে জন্য অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে।
শিশুর চিকিৎসা কী হবে
ভাইরাসবাহিত এ অসুখের কোনো টিকা নেই। আসলে এর কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধও নেই। ফুট-মাউথে আক্রান্তদের জ্বর হলে সাধারণ জ্বরের ওষুধ দিতে হবে। আর অ্যান্টিহিস্টামিন দিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
সাধারণত অসুখবিসুখ হলে শিশুরা কম খাবার-দাবার গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রেও খাবারের জন্য জোর-জবরদস্তির করা যাবে না। শিশু কিছু কম খেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু তাকে যথেষ্ট পানি খাওয়াতে হবে। একটু বড় শিশুকে দুধ বা আইসক্রিম দেওয়া যেতে পারে। মুখের ভেতরে ফুসকুড়ি ওঠায় কম খেতেই পারে। কিন্তু বারবার পানি খাওয়াতে হবে। একটি বিষয় সতর্কভাবে দেখতে হবে, শিশুর প্রস্রাব যেন স্বাভাবিক হয়।
‘ভিটামিন সি’ বেশি করে গ্রহণ করলে এ রোগ দ্রুত সারে। এ রোগ হলে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। তাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধুতে হবে। করোনাভাইরাসের জন্য যেসব নিয়ম মেনে চলা হয়, এ ক্ষেত্রেও তার অনেকটা করতে হবে। সাবান দিয়ে ক্ষতস্থানগুলোও পরিষ্কার করা যেতে পারে।
হ্যান্ড-ফুট-মাউথ নিয়ে ভীতির কোনো কারণ নেই। এটা স্বাভাবিক একটি ভাইরাসবাহিত অসুখ। অসুখ হওয়ার পর চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে এটি সেরে যায়। অভিভাবকদের সচেতনতা একটি বড় বিষয়। এ রোগ যেন অন্যদের মধ্যে ছড়াতে না পারে, সে জন্য তাদের সচেতন হতে হবে। মারাত্মক ছোঁয়াচে এ রোগ যাতে ছড়াতে না পারে, বাড়তি সতর্কতার দিকটি সেখানেই।
লেখক : ডা. মো. সাখাওয়াত আলম,
সহযোগী অধ্যাপক, শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।