এবার ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের প্রায় ২৪ শতাংশেরই বয়স দশ বছরের মধ্যে। ১০ থেকে ২০ বছর বয়সী রোগী প্রায় ২০ শতাংশ।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুর স্টেইন বদলের কারণে আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থা দ্রুত খারাপ হচ্ছে। এই অবস্থায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর স্কুলে যেন এডিস মশা না থাকে সে ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম ১০ দিনে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার ২০০ জন। যাদের বেশিরভাগই ঢাকার বাসিন্দা। কিন্তু শঙ্কার ব্যাপার হলো আক্রান্তদের বড় একটা অংশই শিশু।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের প্রায় ২৪ শতাংশেরই বয়স শূন্য থেকে ১০ বছর। আক্রান্তের হার সবচেয়ে কম ষাটোর্ধদের। ১০ থেকে বিশ বছর বয়সী রোগীর সংখ্যা প্রায় বিশ শতাংশ। চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুতে বয়স্কদের তুলনায় শিশুরা আছে বেশি ঝুঁকিতে। ডেঙ্গুর ডেন থ্রি সেরোটাইপের কারণে এবার ভয়াবহতা আরো বেশি বলছেন তারা।
দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানেই এডিস মশা জন্মানোর মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ঢাকা উত্তরের স্কুলগুলোতে এরই মধ্যে বিশেষ মশানিধন অভিযান চালাচ্ছে নগর প্রশাসন। তবে স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের ডেঙ্গুর ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকালে সারাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে আরো ৩০১ রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই ভর্তি হয়েছে ২৫৩ জন। বাকি ৪৮ জন ঢাকার বাইরে। এ নিয়ে চলতি মাসেই ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিন হাজার ২০০ জন। এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৫৪ জন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকার পাশাপাশি অন্যান্য জেলাতেও ডেঙ্গুর বিস্তার হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কারো মৃত্যু হয়নি।
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সর্বমোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে এক হাজার ২৭১ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এক হাজার ৮৩ জন। অন্যান্য বিভাগে ভর্তি আছেন ১৮৮ জন। বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৫৫৬ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১২ হাজার ২৩১ জন।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে নয় জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিন জন, মে মাসে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন আর জুলাইয়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙে শনাক্ত হয় দুই হাজার ২৮৬ জন। এরপর আগস্টের মাত্র ১০ দিনেই ডেঙ্গু জুলাইয়ের রেকর্ড ভাঙে। পুরো মাসে আক্রান্ত হন সাত হাজার ৬৯৮ জন।
২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করায় এক লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরের বছর ২০২০ সালে তা অনেকটা কমে আসায় হাসপাতালগুলো এক হাজার ৪০৫ জন ডেঙ্গু রোগী পেয়েছিল। এবার আবারো রোগী সংখ্যা ব্যাপকহারে বাড়তে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা মহামারী করোনার মধ্যেই এমনভাবে ডেঙ্গুর বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।