হৃদরোগ বর্তমানে সাধারণ সমস্যার তালিকাতেই ধরা হয়। বিশ্বজুড়ে উল্লেখযোগ্য একটা অংশের মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদরোগ। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর বিশ্বে যত মানুষ মারা যায়, তার ৩১ শতাংশই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
তবে গবেষণা বলছে, হার্ট অ্যাটাক থেকে সাবধান হওয়া যায় ছোট বেলা থেকেই। বয়স বাড়লে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হবেন কি না, তা ১০ বছর বয়সেই বোঝা যেতে পারে।
গবেষণাটি করেছে হার্ভার্ডের পিলগ্রিম হেল্থকেয়ার ইনস্টিটিউট। তারা বলছে, শিশুদের ক্ষেত্রে ১০-১৫ বছর বয়সটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ওই বয়সেই বোঝা যায়, তারা ভবিষ্যতে হৃদরোগের শিকার হবে কি না। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে জামা কার্ডিওলডি নামের মেডিক্যাল পত্রিকায়।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় ধরে দেড় হাজারেরও বেশি শিশুর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন মাপকাঠিতে নজর রেখে ওই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে তারা।
গবেষণার স্বার্থে ৩-১৬ বছর বয়সি শিশুদের খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক শ্রম, ঘুমনোর সময়, বিএমআই, রক্তচাপ, রক্তে শর্করা এবং কোলেস্টেরলের পরিমান সংক্রান্ত তথ্য নিয়মিত ব্যবধানে সংগ্রহ করেছিলেন গবেষকেরা। সেই সমস্ত অর্জিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দশ বছর বয়স থেকেই শিশুদের হার্টের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে।
কারণ হিসাবে গবেষকেরা বলছেন, সাধারণত ১০ বছর বয়স থেকেই শিশুরা বাবা-মায়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরোতে শুরু করে। ফলে তাদের খাদ্যাভ্যাস বদলায়। বাইরের খাবার দাবার খাওয়ার অভ্যাস শুরু হয়। বদলে যায় রুটিনও। শিশুদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত ঘুম, অস্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস, অনিয়মিত জীবনযাপন হার্টের উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে।
গবেষণালব্ধ প্রতিবেদনটি যিনি লিখেছেন, তার নাম ড. ইজাজউদ্দিন আরিস। তিনি হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের সহ অধ্যাপক। ইজাজউদ্দিন লিখেছেন, ছোট থেকেই জীবনযাপনে রাশ টানলে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করলে হার্টঅ্যাটাককে দূরে রাখা যেতে পারে। সন্তানের ক্ষেত্রে তাই বাবা-মায়েদের ওই বয়স থেকেই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সেক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়লে ১৫ বছর বয়স থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শে হালকা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খাওয়ানো গেলে হার্ট অ্যাটাককে এড়ানো যেতে পারে বলেও মনে করছেন ইজাজউদ্দিন। তবে ওষুধ না খেয়ে স্বাস্থ্যকর যাপনের অভ্যাস তৈরি করেও হৃদরোগ ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষকেরা।