এক ধরনের বার্ধক্যজনিত ও সুস্পষ্ট কারণ বিহীন রোগ। স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া কিংবা ভুলে যাওয়া, উৎকণ্ঠা জনিত বিভিন্ন শারীরিক বা সাইকোলজিকাল কারণে ভোগা রোগের নাম অ্যালজাইমার। এই রোগের কোনো প্রতিকার নেই। রোগটি বাড়ার সাথে সাথে রোগীর অবস্থার অবনতি হয় এবং অবশেষে রোগী মৃত্যুর পথে পরিচালিত হতে পারে।
এটি একটি নিউরোডিজেনেরেটিভ রোগ যা ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং পরে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই এটি ডিমেনশিয়ার মূল কারণ। অ্যালজাইমার্স শব্দটি শুনলে মনে হয় ভুলে যাওয়া। জিনিস কোথায় রেখেছেন ভুলে যাওয়া, নাম ভুলে যাওয়া, কাজ ভুলে যাওয়া, সবথেকে বড় কথা ‘ভুলে যাবো’ এই উত্কণ্ঠায় ভোগা। প্রত্যেকেই পরিবারের বয়স্কদের মধ্যে এই লক্ষণগুলো বেশি দেখা যায়।
দিন দিন এই রোগ পুরো বিশ্বে ভয়াবহ আকারে বেড়েই চলেছে। মানুষ এই রোগটা নিয়ে যাতে সচেতন হয়, সতর্ক হয় এ জন্যই ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় অ্যালজাইমার্স ডে বা বিশ্ব অ্যালজাইমার রোগ দিবস। ১৯৯৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের এডিনবরা একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়, ২১ সেপ্টেম্বর হবে বিশ্ব অ্যালজাইমার রোগ দিবস।
ইতিহাস
১৯০১ সালে প্রথমবার একজন জার্মান মনোবিদ অ্যালয়েজ অ্যালজাইমার এই রোগটিকে চিহ্নিত করেন, তখন থেকেই এই রোগটিকে তার নাম অনুসারে অ্যালজাইমার্স রোগ নামে ডাকা হয়ে থাকে। এই রোগটি তিনি একজন ৫৫ বছর বয়সী মহিলার মধ্যে চিহ্নিত করেছিলেন। এবং ১৯০৬ সাল পর্যন্ত অ্যালজাইমার তার চিকিৎসা করেন এবং পর্যবেক্ষণ করেন গভীর ভাবে। সেই মহিলার মৃত্যুর পরই তিনি এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকাশ্যে আনেন। এরপরের পাঁচ বছর একই ধরনের বহু ঘটনা আসতে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। তখন থেকেই এই রোগটিকে অ্যালজাইমার্স বলে অভিহিত করা শুরু হয়।
বিংশ শতাব্দীতে ৪৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যেই এই রোগ হতে দেখা যায় সব থেকে বেশি। আর এই রোগ থেকেই ডিমেনশিয়া হতে থাকে। ১৯৮৪ সাল থেকে অ্যালজাইমার্স ডিজিজ ইন্টারন্যাশনাল এই রোগে আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসা করাতে সাহায্য করতে থাকে এবং একই সঙ্গে সচেতনতাও ছড়াতে থাকে। ১৯৯৪ সালে এই সংস্থাই ২১ সেপ্টেম্বরকে বেছে নেয় বিশ্ব অ্যালজাইমার্স দিবস হিসেবে।
এই দিনের গুরুত্ব
প্রতি বছরই এই দিনে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় থাকে। যাতে করে জানা যায় রোগটি কত ভয়াবহ হারে প্রতি বছর বাড়ছে। মূল কথা মানুষকে সচেতন করা।
এই রোগের তিনটি ধাপ হয়, প্রাথমিক ধাপে রোগ ধরা পড়লে এবং সঠিক চিকিৎসা হলে দ্রুত সেরে ওঠা যায়। কিন্তু শেষ ধাপে যখন ধরা পড়ে এই রোগটি তখন আর কিছুই করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
লক্ষণ
এই রোগের মূল লক্ষণ হচ্ছে সব জিনিস ভুলে যাওয়া, কিছু মনে রাখতে না পারা। পরে বাড়তে বাড়তে কথা বুঝতে না পারা, ভাষা চিনতে বা বলতে না পারা, মুড সুইং, হারিয়ে যাওয়ার সমস্যা বাড়তে থাকে। স্বাভাবিক ডিমেনশিয়ার কারণে অনেক সময়ই আপনি সপ্তাহের দিন ভুল করতে পারেন, কিন্তু যদি তারিখ, ঋতু, সময় গুলিয়ে যায় তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অ্যালজাইমারের অন্যতম লক্ষণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পরিচিত মানুষদের উপর হামেশাই চিৎকার-চেঁচামেচি করতে পারে এই রোগে আক্রান্ত রোগী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাল বা তারিখ কিছুতেই মনে না পরার এর অন্যতম লক্ষণ। এক্ষেত্রে মারাত্মক হারে মুড স্যুইং দেখা দিতে পারে। কথা জড়িয়ে যাওয়া বা সঠিকভাবে কথা বলতে না পারাও এর লক্ষণ। থাইরয়েডের সমস্যাও দেখা দিতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। অ্যালজাইমার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা খুব তাড়াতাড়ি অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন। আশেপাশে ঘটে চলা সবকিছুতেই অবাক হয়ে যাওয়া। ঘুমের সমস্যা বা অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিলে চিন্তার বিষয়। পরিচিত মানুষদের থেকে একেবারেই নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা অ্যালজাইমারের অন্যতম লক্ষণ। তাই এই রোগ সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান এবং সচেতনতা প্রয়োজন।
সূত্র : হিন্দুস্থান টাইমস।