এক বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার এখন নিম্নমুখী হলেও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মারা যায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অপুষ্টির জন্য। শিশুমৃত্যুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশের কারণ মারাত্মক অপুষ্টি। দেশে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী বিবাহিত নারীর সংখ্যা প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ নারীর ওজন প্রয়োজনের তুলনায় কম অর্থাৎ তারা অপুষ্টিতে ভুগছে।
কারণ
দেশে শিক্ষার হার বাড়লেও বেশির ভাগ মানুষই পুষ্টি বিষয়ে সচেতন নয়। পুষ্টিজ্ঞানের অভাবে মা ও শিশুদের সঠিক পুষ্টি ও যত্ন নিশ্চিত হচ্ছে না। পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে, বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারের নারীরা প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না।
কম খরচে বেশি পুষ্টি
শাক-সবজি ও ফলমূল বাজারে স্বল্পমূল্যে পাওয়া গেলেও অনেকেই আবার শাক-সবজি পছন্দ করেন না।
কিন্তু সুস্থ থাকতে সবারই উচিত শাক-সবজি, ফলমূল খাওয়া। পুষ্টিকর খাবার বলতে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম খেতে হবে এমনটা নয়। আমাদের দেশে বেশির ভাগ মানুষের শর্করার প্রধান উৎস ভাত। প্রোটিন হিসেবে মাছ-মাংস প্রতিদিনের পাতে না উঠলেও সমস্যা নেই।
ডাল, ছোলা, বাদাম, শিমের বিচি, সয়াবিন ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ উৎসও দিতে পারে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের জোগান। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড ডিম ছাড়া অন্য কোনো খাদ্যে এককভাবে পাওয়া যায় না। তাই প্রতিদিন একটা ডিম খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। সেটাও দুষ্প্রাপ্য হলে ভাতের সঙ্গে ডাল মিশিয়ে অ্যামাইনো এসিডের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। চাল, রুটি, যব ইত্যাদি শস্যদানায়ও প্রোটিন রয়েছে।
সুতরাং শস্যদানার সঙ্গে যদি ডাল বা ডালজাতীয় খাদ্য মিশিয়ে খাওয়া যায়, তবে প্রোটিনের চাহিদা অতিরিক্ত মাছ-মাংস ছাড়াও পূরণ করা সম্ভব। মিশ্র খাবারও খাওয়া যেতে পারে; যেমন—খিচুড়ি। চাল, ডাল, সবজি মিশ্রিত থাকায় ভিটামিন, খনিজ, আমিষ, কার্বোহাইড্রেটসহ বিভিন্ন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে।
আবার সয়াবিন, শিমের বিচি—এগুলো দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন হলেও মাংসের মতো রান্না করলে সেগুলো থেকে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। মিষ্টিকুমড়ার বিচি আমরা অনেকেই ফেলে দিই, কিন্তু মিষ্টিকুমড়ার বিচি শুকিয়ে ভাজি করে খাওয়া যায়। আবার ছোট মাছও তালিকায় রাখতে পারেন। এগুলো প্রথম শ্রেণির প্রোটিন, খরচ কমাতে ছোট মাছ আনলে মাথা আলাদা করে রাখতে পারেন। মাছটা আগে খাবেন। পরে আরেক দিন মাথা ভর্তা করে খেতে পারেন। বড় মাছের ক্ষেত্রে মাথা ও লেজটাকে রেখে দেওয়া যেতে পারে। পরে সবজি দিয়ে রান্না করে খেলেন। এভাবে হিসাব করে চললে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হলো আবার খরচটাও কমল।
লেখক : নাহিদা আহমেদ
পুষ্টিবিদ
ফরাজী হাসপাতাল, বারিধারা