ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জনগনের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার ৯টি উপজেলায় ৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও কোন হাসপাতালেই আইসিইউ বেড নেই। সরকারি এই হাসপাতাল গুলো ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রয়েছে বেসরকারিভাবে গড়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সেরকারি হাসপাতাল। কিন্তু কোন বেসরকারি হাসপাতালেও নেই আইসিইউ বেড।
সরকারি ও বেসরকারি কোন হাসপাতালে আইসিইউ বেড না থাকায় গুরুত্বর ও আশঙ্কাজনক অবস্থায় রোগীদেরকে চিকিৎসা সেবার জন্য রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল বা কুমিল্লা জেলায় পাঠাতে হয়।
৩৩ লাখ জনসংখ্যার জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে বলা হয়, সুরের শহর, সাংস্কৃতিক রাজধানী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরকারি ও বেসরকারি কোন হাসপাতালে আইসিইউ বেড না থাকায় অন্তিম সময়ে কোন রোগীকে ঢাকায় অথবা কুমিল্লায় পাঠাতে হয়। এতে রোগীর চিকিৎসাসেবার ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। যা বহনকরা নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
জেলার কোন সরকারি বা বে-সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার সচেতন নাগরিকেরা। তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালসহ অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে আইসিইউ বেড স্থাপনের দাবি জানান।
দেশব্যাপী করোনার ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। করোনা রোগীদের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২১৪টি আইসোলেশন বেড স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ৫০টি, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ২০টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১০০টি ও জেলার অন্যান্য উপজেলায় ৪৪টি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাস মহামারিকালে জেলাবাসীর ভরসারস্থল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল। এই হাসপাতালে অর্থপেডিক, গাইনি, শিশু, সাজারি, কার্ডিওলজি বিভাগ সহ মোট ১৪টি বিভাগ চালু থাকলেও কোন আইসিইউ ব্যবস্থার নেই। ফলে রোগীরা সু-চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্তিম সময়ে তাদেরকে চিকিৎসা নিতে হয় ঢাকা অথবা কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে।
করোনাকালীন সময়ে জেলার কোন হাসপাতালে আইসিইউ বেড না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার সচেতন নাগরিকসহ রোগীর স্বজনরা।
এ ব্যাপারে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ রানা নূরুস শামস বলেন, আমাদের হাসপাতালে আইসিইউ বেড না থাকায় করোনা রোগীদের জন্যে ন্যাজল ক্যানোলাযুক্ত অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। আমরা রোগীদেরকে সর্বাত্মক চিকিৎসা দিচ্ছি। তিনি বলেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ৫টি আইসিইউ বেড পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ একরাম উল্লাহ বলেন, জনগনের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ২৫০শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার ৯টি উপজেলায় ৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ জেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক বে-সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে।
তিনি বলেন, করোনা রোগীদের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২১৪টি আইসোলেশন বেড স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ৫০টি, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ২০টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১০০টি ও জেলার অন্যান্য উপজেলায় ৪৪টি। করোনায় আক্রান্তদেরকে হাসপাতালের আইসোলেশনের বেডে রেখে অক্সিজেনের মাধ্যমে সেবা দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আইসিইউ বেড মনিটরসহ দেয়ার জন্যে মন্ত্রনালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। তবে কবে নাগাদ তা পাওয়া যাবে সেটা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, গত বছর করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর পরই আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ বেডসহ আধুনিক সুযোগ সুবিধা সংযোজনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব করেছি ও চিঠি দিয়েছি। ইতোমধ্যে সেখান থেকে আমরা আশ্বাসও পেয়েছি। বর্তমানে অক্সিজেন ব্যবস্থার কাজ শেষ হয়েছে। সেই সাথে দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন কমপক্ষে ৫টি আইসিইউ বেড স্থাপন করা যায় আমরা সেই চেষ্টা করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনায় আক্রান্ত ৩হাজার ৫শ ২জন। বর্তমানে সেফ আইসোলেসনে আছেন ৪৭৮ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেসনে আছেন ৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫২জন।