ছবি: ইন্টারনেট
দুই দিনে ২৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত এডিসের লার্ভা থাকায় তিন লাখ টাকা জরিমানা
ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত দুই দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৫ জন। সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর মূল মৌসুম শেষ হওয়ার পরও বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু রোগী। গতকাল শুরু হওয়া ডিএনসিসির অভিযানে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় তিন লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক দিনের থেমে থেমে বৃষ্টিতে এডিস মশার লার্ভা বংশবিস্তার ও বৃদ্ধির সুযোগ পেয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার হওয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। দ্রুত মশার বংশবিস্তারের উৎস নির্মূল করলে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৬৫২ জনের। গতকাল ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪০ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগে দুজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় আটজন এবং বাইরে দুজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। গত রবিবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ জন। চলতি বছর ডেঙ্গু সন্দেহে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এসব মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনার জন্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। আইইডিসিআর এখন পর্যন্ত দুটি মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা করে একজনের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে।
এ বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ জন, মার্চে ২৭ জন, এপ্রিলে ২৫ জন, মে মাসে ১০ জন, জুনে ২০ জন, জুলাইতে ২৩ জন, আগস্টে ৬৮ জন, সেপ্টেম্বরে ৪৭ জন, অক্টোবরে ১৬৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এর আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, ২০১৯ সালে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু জ্বরে মারা গিয়েছেন ১৭৯ জন।
ডিএনসিসির চিরুনি অভিযান : এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) চিরুনি অভিযানের প্রথম দিনে গতকাল ১৩ হাজার ৮২৫টি বাড়ি, স্থাপনা পরিদর্শন করা হয়েছে। ৯৪টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এডিসের লার্ভা পাওয়ায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৬টি মামলায় ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ডিএনসিসির সব ওয়ার্ডে (৫৪টি) একযোগে এই চিরুনি অভিযান পরিচালিত হয়। উত্তরা অঞ্চলে (অঞ্চল-১) মোট ১ হাজার ৩৭৭টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৪টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় এ সময় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জুলকার নায়নের নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৪টি মামলায় মোট ২৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
মিরপুর-২ অঞ্চলে (অঞ্চল-২) ২ হাজার ৬৩৬টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ২টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। মহাখালী অঞ্চলে (অঞ্চল-৩) মোট ১ হাজার ৬০৩টি বাড়ি, স্থাপনা ইত্যাদি পরিদর্শন করে ৩৯টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ১ হাজার ১৫৪টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় এ সময়ে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল বাকীর নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৬টি মামলায় মোট ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। মিরপুর-১০ অঞ্চলে (অঞ্চল-৪) মোট ১ হাজার ৪৮৫টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৩টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। কারওয়ান বাজার অঞ্চলে (অঞ্চল-৫) মোট ২ হাজার ৪৭৯টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৭টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পার্শিয়া সুলতানা প্রিয়াংকার নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২টি মামলায় ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। হরিরামপুর অঞ্চলে (অঞ্চল-৬) মোট ১ হাজার ৪২৮টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৯টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল হামিদ মিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২টি মামলায় ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। দক্ষিণখান অঞ্চলে (অঞ্চল-৭) মোট ৯৩৮টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ২টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। উত্তরখান অঞ্চলে (অঞ্চল-৮) এর অধীনে মোট ৭৪১টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১টি স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। ভাটারা অঞ্চলে (অঞ্চল-৯) মোট ৪৯৬টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৬টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। ২টি মামলায় ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।