ক্যান্সার হাসপাতালের অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ হাই কোর্ট

0
1004
Spread the love

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি রোধে দুদকের ২৫ সুপারিশ বাস্তবায়নের তাগিদ

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আইসিইউয়ের জন্য আটটি অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেটরি ভেন্টিলেটর (এআরভি) কেনার ১২ বছরেও তা স্থাপন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট। আদালত বলেছে, হাসপাতালটির চরম অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কর্তব্যে অবহেলা শুধু দুঃখজনকই নয়, তা নিন্দনীয় ও উদ্বেগের বিষয়। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল নিয়ে একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে জারি করা রুল নিষ্পত্তির সময় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ মন্তব্য করে। এ সংক্রান্ত রায়ে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি রোধে দুদকের করা ২৫ সুপারিশ বাস্তবায়নে তাগিদ দিয়েছে হাই কোর্ট। আদালত দায়িত্ব অবহেলার দায়ে ডা. এএমএম শরিফুল আলম ও ডা. মোল্লা ওবায়দুল্লাহর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে। আদেশে বলা হয়, পিআরএলজনিত কারণে দুজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয় বলে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য প্রতীকী ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ লাখ টাকা করে আদায়ের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হলো। ক্ষতিপূরণের অর্থ সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের উন্নয়ন তহবিলে জমা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে হাই কোর্ট। ক্ষতিপূরণ প্রদানে ব্যর্থ হলে পিডিআর আইনের বিধান অনুযায়ী ওই টাকা আদায় করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ডা. মোয়াররফ হোসেনের অবসরকালীন সুবিধা স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। কারণ হিসেবে হাই কোর্ট বলেছে, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে ভেন্টিলেটরগুলো সচলের অনুরোধ জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন ডা. মোয়াররফ। তবে ন্যাশনাল ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) কর্তৃপক্ষ সচলের দুটি চিঠি পায়নি বলে তদন্তে বলা হয়েছে।

এ অবস্থায় রায় পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি করে ১৫ কার্যদিবসের তদন্ত শেষ করতে বলা হয়েছে। মোয়াররফের দাবি সঠিক না হলে তাকেও পাঁচ লাখ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর দাবি সঠিক হলে নিমিউ অ্যান্ড টিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তা মো. আবদুল কাইয়ুম (যুগ্ম সচিব, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) এবং মো. রেজানুর রহমানের (যুগ্ম সচিব) কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। এ ছাড়া ডা. মানস কুমার বসুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হাই কোর্ট বলেছে, রাষ্ট্রীয় অর্থ যথাযথভাবে ব্যয়ের লক্ষ্যে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য দেশের সব সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণে কয়েকটি নিয়মনীতি ঠিক করে দিয়ে তা অনুসরণ করতে হবে।

পাশাপাশি ঘোষিত রায়ে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি রোধে দুদকের করা ২৫ সুপারিশ বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় অর্থ যথাযথভাবে ব্যয়ের লক্ষ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য দেশের সব পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণে বেশ কিছু নিয়মনীতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। আদালত বলেছে, সরকারি হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবাস্তব ও উচ্চমূল্য নির্ধারণ করে প্রাক্কলন তৈরি করা হয়। প্রাক্কলন নির্ধারণে সঠিক ও বাস্তবসম্মত মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। এ ধরনের যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসাসামগ্রী বা ওষুধ ক্রয়ের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্বারা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চাহিদা নিরূপণ করতে হবে। এই বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্বারা চাহিদা নিরূপণ করে সরকারি ক্রয় বিধিমালা অনুসরণ করে সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন চিকিৎসাসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হবে। ঠিকাদারদের কাছ থেকে যন্ত্রপাতি গ্রহণ বা বুঝে নেওয়ার আগে সরবরাহ করা পণ্যের মান ও গুণাগুণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বলা হয়েছে। পত্রিকার প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে এনেছিলেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার, সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সামীউল আলম সরকার ও উর্বষী বড়ুয়া সীমি। ডা. মোয়াররফ হোসেনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুশফিক উদ্দিন বখতিয়ার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে