রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি হওয়া রোগীদের দামি ওষুধ ও পথ্য বিক্রি করে দেন হাসপাতালেরই স্টাফরা।
নার্স ও কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট প্রতিদিনই এ ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। বিষয়টি হাসপাতালে অনেকটা ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানা গেছে। বিলকিস খান ও তার স্বামী গত ৮ নভেম্বর রাতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি হন। ১ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩ ও ১৪ নম্বর সিটে তারা ভর্তি ছিলেন। গত ১৭ তারিখ বিকাল ২টার পর তারা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। বিলকিস খান হাসপাতালে তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, তাদের দুজনকেই ক্লিক্সেন (Clexane) ইনজেকশন প্রেসক্রাইব করা হয়। ১৬ তারিখে হাসপাতালের ফার্মেসিতে ওষুধটি না পেয়ে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে উত্তরা লাজফার্মা থেকে চারটি ইনজেকশন আনান। ওই আত্মীয় ১৬ তারিখ বিকাল পৌনে ৪টায় হাসপাতালের ফ্রন্ট ডেস্কে ওষুধ জমা দিয়ে তাকে ফোন করে জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি ওই রাতে এমনকি পরের দিন দুপর পর্যন্ত ইনজেকশন পাননি। এদিকে পরের দিন ১৭ তারিখে করোনার নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পর বেলা ২টায় যখন তারা হাসপাতাল ছেড়ে চলে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন দেখতে পান যে, হাসপাতালের একজন নার্স তার ইনজেকশন চারটি তারই সামনে অন্য আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। লাজফার্মার প্যাকেটে তিনি নিজের নাম লেখা দেখতে পান। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি নার্সকে বললে ওই নার্স তার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে ইনজেকশন বিক্রির টাকা পকেটে নিয়ে অন্যদিকে চলে যান। পিপিই পরা থাকায় তিনি নার্সের মুখ দেখতে পাননি। যেহেতু তারা দুজনই করোনামুক্ত সেজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে ওষুধের দাবি ছেড়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, সাধারণ ওষুধ সবই হাসপাতাল থেকে দেওয়া হতো। দামি ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হতো। তাদের হাসপাতাল থেকে ইনহেলার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইনহেলার দুটোই ছিল খালি। ভিতরে কোনো গ্যাস ছিল না। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বরত নার্সকে জানালেও ওই নার্স নির্লিপ্ত ছিলেন। বিলকিস খান জানান, একজনের ওষুধ, জরুরি পথ্য নার্স ও স্টাফরা অন্যজনের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়টি ওই হাসপাতালে ওপেন সিক্রেট। এ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। এর ফলে বহু মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু চিকিৎসা না পাওয়ার ভয়ে এ নিয়ে কেউ কথা বলেন না। তবে হাসপাতালের চিকিৎসকরা আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে হাসপাতালের করোনা ইউনিটের কেউই কথা বলতে রাজি হননি।