মাস্ক না পরলে জেলে যেতে হবে
সরকার বিনামূল্যে করোনাভাইরাসের তিন কোটি ডোজ টিকা বিতরণ করবে। মহামারী মোকাবিলায় যারা সামনে থেকে কাজ করছেন, তাদের মধ্যে আগে এই টিকা বিতরণ করা হবে।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা ও ভ্যাকসিন সংগ্রহের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে সোমবার মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি জানান, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ঘরের বাইরে মাস্ক ছাড়া বের হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় কারাগারেও যেতে হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এবং সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ সংগ্রহের প্রস্তাবে গত ১৪ অক্টোবর অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে সরকার চুক্তিও করেছে।
ভ্যাকসিন কেনার জন্য ১৬ নভেম্বর অর্থ বিভাগ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এখন ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তাব অর্থনৈতিক ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যাবে। সে প্রস্তাব চলে এসেছে।
প্রথম দফায় ভ্যাকসিন কারা পাবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা গাইডলাইন আছে। প্রথম কারা পাবে, দ্বিতীয় ধাপে কারা পাবে, সে অনুযায়ী তারা একটা প্রোগ্রাম ডেভেলপ করছে। ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার, পুলিশ, প্রশাসনের লোক যারা মাঠে চাকরি করছেন, তারপর বয়স্ক লোক, বাচ্চা- এরকম একটা প্রটোকল আছে। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মানুষকে এই ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দেওয়া হবে। টাকা সরকার পে করে দিচ্ছে। তিন কোটি ভ্যাকসিন ফ্রি দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টিকা বিতরণে কেউ দুর্নীতি করলে আমাদের জানাবেন, আমরা ব্যবস্থা নেব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এই ভ্যাকসিন কিনতে মোট কত টাকা খরচ হবে তা ক্রয়চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। বুধবার বিষয়টি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উঠবে। আরও অনেক ভ্যাকসিনের বিষয়ে মন্ত্রিসভায় তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা বলেছেন, যোগাযোগ রাখছেন। এখনই বলা যাচ্ছে না কোনটা বেশি কার্যকর হবে। আমাদের এক নম্বর শর্ত হলো, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল মানতে হবে। যার সঙ্গে চুক্তি করবেন, যদি মেজর কোনো সমস্যা হয়, তাহলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকলের বাইরে গেলে ওই চুক্তির কোনো মূল্য থাকবে না।
বাংলাদেশে চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাকের সম্ভাব্য টিকার ট্রায়াল আটকে থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওরা একটা টাকা চাচ্ছে। সরকার এখনো দেয়নি বা রাজি হয়নি। আমরা ওটা এখনো বাতিলও করিনি।
জেলে যেতে হবে : মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সবার মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের ‘শক্ত অবস্থানে’ যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগেই আমরা বলেছি, এ সপ্তাহ থেকে আরেকটু স্ট্রং অ্যাকশনে যাব। আমার মনে হয়, ঢাকার বাইরে কিছুটা পজিটিভ, ডিসিরা বলছেন জেলা সদরে মানুষ মোটামুটি কেয়ারফুল হচ্ছে। ঢাকা শহরে বোধহয় এখনো পুরোপুরি কেয়ারফুল হয়নি। তবে মোটামুটি একটা বার্তা যাচ্ছে যে ফাইন হয়ে যাবে। ফাইন দিতে হবে ৫০০ টাকা। বলে দিয়েছি, এখন থেকে ম্যাক্সিমাম ফাইন কর। না হলে আমরা আরও ইনস্ট্রাকশন দেব। বলেছি সর্বোচ্চ জরিমানা করতে।
তারপরও মাস্ক না পরলে কী হবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তারপর জেলে যেতে হবে, আর কি করব যদি না শোনে…। আমরা তো ঝুঁকি নিতে পারি না। আমাদের যতটুকু সম্ভব করতে হবে। আমরা বলে দিয়েছি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে সারা দেশে যেভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলছে, সেভাবে আরও ৭ থেকে ১০ দিন চালিয়ে এরপর থেকে আরও কঠোর শাস্তি দেওয়ার জন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মিথ্যা তথ্য দিলে শাস্তি : এ ছাড়া মন্ত্রিসভা বৈঠক জাতীয় জরুরি সেবা নীতিমালা-২০২০ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিলে তাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে দন্ডবিধি অনুযায়ী সাজা দেবে সরকার। জাতীয় জরুরি সেবা পরিচালনায় একটি আলাদা ইউনিট গঠন করে কমপক্ষে ডিআইজি পদমর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ, জননিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, অপরাধ দমন, জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। জনজীবনের সফলতা ও সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ সংক্রান্ত এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে নিরাপদ জীবন ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংকটাপন্ন মানুষকে যাতে সহায়তা করা যায়, দুর্ঘটনা ও অপরাধ প্রতিরোধ করা যায়। অপরাধের শিকার কোনো ব্যক্তি বা সম্পদ উদ্ধার করা যেন সহজ হয়।