ইয়োগা বা অভ্যাস হল শরীর আর মন যুক্ত করে সুস্থ থাকার এক প্রাচীন পদ্ধতি। আসলে ইয়োগা বা যোগ তো শুধু ব্যায়াম নয়, যোগ কথার আসল অর্থ হল চেতনা।
আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না যোগ বা ইয়োগা আসলে কী? এটা কি শুধু শরীরকে বাঁকাজোকা করে বসে থাকা? নাকি এর মানে রয়েছে!
ইয়োগা করে কি সত্যি আমাদের কোনো উপকারে আসবে? যদি সত্যি কোনো উপকারে আসে তাহলে সে উপকারগুলো আসলে কী বা এর যুক্তিসঙ্গত কোনো ব্যাখ্যা কি আছে?
ইয়োগা কথার সাধারণ অর্থ ইউনিয়ন বা মিলন। এ মিলন কার সঙ্গে কার। আপনার সঙ্গে এ সম্পূর্ণ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের। মানুষের দেহ, মন ও এনার্জি বা শক্তি- এ তিনটি জিনিসের সমন্বয়ে আমাদের শরীর চলে। এর কোনো একটি যদি ঠিকঠাক কাজ না করে তাহলে আমাদের শরীর ঠিকভাবে কাজ করবে না। আর ইয়োগা ঠিক এ কাজটাই করে থাকে এ তিনটির সমন্বয় করে। যদিও ইয়োগা নিয়মে মানুষকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. আন্না মায়াকোশা বা খাবারের মাধ্যমে যে শরীর তৈরি হয়েছে তাকে বুঝায়।
২. মানো মায়াকোশা বা যেটা আমাদের মনকে বোঝায়।
৩. প্রাণা মায়াকোশা বা যেটা শরীরের শক্তিকে বোঝায় বা এনার্জিগুলোকে বুঝায়। এ তিনটি ভাগ শারীরিক যেগুলো আমরা অনুভব করতে পারি। বাকি দুটি হল দৃশ্যমান নয় যেগুলো আমরা অনুভব করতে পারি না। যখন ওপরের তিনটি ব্যালেন্সভাবে কাজ করলে বাকি দুটিকে আমরা এক্সিপ্রিয়েন্স বা অনুভবন করতে পারি। বাকি দুটি হল-
৪. ভিগনাম মায়াকোশা বা বিজ্ঞান বা তার অর্থ বিশেষ জ্ঞান যা আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয়র বাইরে।
৫. আনান্দা মায়াকোশা বা আনন্দ এটা নন-ফিজিক্যাল যেটা আমরা অনুভব করি মাত্র।
তাই ইয়োগার উদ্দেশ্য শরীরকে স্বাস্থ্যবান করা নয়। বরং তার সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুর মিলন ঘটিয়ে ফিজিক্যাল ও নন-ফিজিক্যাল তার মধ্যে ইউনিয়ন বা মিলন সৃষ্টি করা। যাতে সর্বক্ষেত্রে আনন্দের সঙ্গে নিজের সর্বোচ্চ পারফর্মেন্স দিতে পারেন।
আসন ও এর সতর্কতা
মানব জীবন হল আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। আমাদের অস্তিত্ব হিসেবে আমরা পেয়েছি দেহ, মন ও আত্মা। আমাদের এই দেহ, মন ও আত্মা একীভূত করার নামই ইয়োগা বা যোগ।
নিয়মিত যোগচর্চার মাধ্যমে অসুস্থ শরীর রোগমুক্ত ও সুস্থ হয়ে ওঠে এবং সুস্থ শরীর আরও তেজ ও সতেজ হয়ে ওঠে। চঞ্চল ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মন শান্ত হতে থাকে।
এ অবস্থায় বুদ্ধি দ্বারা আমরা শান্ত মনকে চালনা করতে পারি এবং আমাদের দেহও মনের সঙ্গে সমান তালে সাড়া দেয়। যোগানুশীলনের ধারাবাহিকতায় অশান্ত মন যখন সম্পূর্ণ চিন্তামুক্ত ও শান্ত হয়ে পড়ে তখন আমাদের ‘আত্মার’ উপলব্ধি হয়।
শীর্ষাসন
এই আসন হচ্ছে সব আসনের রাজা। এতে মস্তিষ্ক শুদ্ধ রক্তপ্রাপ্ত করে যার ফলে চোখ, কান, নাক ইত্যাদি আরোগ্যপ্রাপ্ত হয়।
পিটুইটারি ও পিনিয়াল গ্ল্যান্ডকে সুস্থ করে তুলে মস্তিষ্ককে সুস্থ করে।
স্মৃতি, মেধা বিকশিত করে।
হিস্টিরিয়া, হার্নিয়া, অণ্ডকোষ বৃদ্ধি ইত্যাদি রোগ দূর করে
স্বপ্নদোষ, নপুংসকতা, বন্ধ্যত্ব ইত্যাদি ধাতু রোগকে নির্মূল করে
মুখমণ্ডলে এক আভা এবং তেজের সৃষ্টি করে
অসময়ে চুল পড়ে যাওয়া এবং পেকে যাওয়া বন্ধ করে।
অষ্টবক্রাসন
বাহু এবং কব্জিকে প্রচণ্ড শক্তিশালী করে।
পেটের মাংসপেশিগুলোকে শক্তিশালী করে এবং চর্বি কমায়
মনোযোগ ও ভারসাম্য বাড়ায়
মহিলাদের মাসিক বিকৃতি দূর করে এবং মেনোপজ হওয়ার পর যেসব জটিলতা দেখা দেয় সেগুলো থেকে মুক্তি দেয়।
চক্রাসন
মেরুদণ্ডের হাড়কে নমনীয় করে যৌবন ধরে রাখতে সাহয্য করে। শরীরে স্ফূর্তি, শক্তি এবং তেজ বৃদ্ধি করে, কোমর ব্যথা দূর করে। নারীদের গর্ভাশয় বিকারকে দূর করে।
বীর ভদ্রাসন
বাঁধ, বাহু, পা, গোড়ালি এবং পিঠের মাংসপেশিগুলোকে পরিপুষ্ট করে শক্তিশালী করে তোলে, রক্ত সঞ্চালন ও শ্বসন প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়।
ফুসফুস তথা বুকের প্রসারণ ঘটায়, অনুলোম-বিলোম প্রাণায়াম, সব ধরনের বাতরোগ, কফরোগ ও পিত্তের রোগ দূর করে।
ধাতুরোগ, শুক্রক্ষয়, সাইনাস, হাঁপানি, টনসিল ইত্যাদি রোগ দূর করে ও হৃদয়ের ধমনিতে আসা ব্লকেজ পর্যন্ত খুলে যায়।
উত্থিত পদ্মাসন
পেটের বাড়তি চর্বি কমায়, হাতে প্রচণ্ড শক্তি আনে, হাত ও কাঁধের পেশি পুষ্ট করে
গোমুখাসন
পুরুষের অণ্ডকোষ বৃদ্ধি, ধাতুরোগ, ডায়াবেটিস এবং স্ত্রীরোগে বিশেষ লাভকারী আসন ও সন্ধিবাত ও গেঁটে বাত দূর করে।
সতর্কতা
হৃদরোগী, উচ্চরক্তচাপ এবং কোমর যন্ত্রণায় ভুগতে থাকা ব্যক্তিরা এ আসন করবেন না। যারা কাছের জিনিস দেখতে চশমা ব্যবহার করেন তারা এ আসন করবেন না। সর্দি-কাশি হলেও এই আসন করা উচিত নয়।