ফাইজারের টিকার জন্য আবেদন সরকারের

0
710
Spread the love

ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকার জন্য আবেদন করেছে বাংলাদেশ। এটি পেতে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে টিকার বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্সের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে এই টিকা দেশে আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য কাজ শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দু-এক দিনের মধ্যেই ফাইজারের টিকা আমদানি ও ব্যবহারের অনুমোদন দিতে পারে।

কোভ্যাক্স থেকে প্রথমেই বাংলাদেশ মোট জনসংখ্যার শূন্য ৪ শতাংশের জন্য টিকা পাবে। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই টিকা আসতে পারে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। একই সঙ্গে বেসরকারি ব্যবস্থাপনা ও ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলোতে টিকা দেওয়ার জন্য পৃথক নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ফাইজারের টিকা পেতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আবেদন করেছে। একই সঙ্গে ওই টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরও অনুমোদন দেবে। এ-সংক্রান্ত একটি ফাইলে তিনি স্বাক্ষর করেছেন। এখন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অন্যান্য কার্যক্রম শেষে ফাইজারের টিকা দেশে আমদানি এবং তা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেবে।

কোভ্যাক্স থেকে আট লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই টিকা পেলে তা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর প্রয়োগ করা হবে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের (সিইপিআই) নেতৃত্বে কভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি (কোভ্যাক্স) গড়ে উঠেছে। চলতি বছর তারা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ৯২টি দেশে ১৩০ কোটি ডোজ টিকা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। প্রতিটি দেশের ২০ শতাংশ মানুষ কোভ্যাক্স থেকে টিকা পাবেন। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ টিকা পেতে যাচ্ছে। কোভ্যাক্সের পক্ষ থেকে গত ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশসহ ১৯২টি সদস্য দেশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জানুয়ারির শেষ অথবা ফেব্রুয়ারিতে তাদের টিকা দেওয়া শুরু হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি কোভ্যাক্স থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশ ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা নেবে কিনা। এ জন্য সরকারকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে চিঠি দিয়ে জানাতে বলা হয়। একই চিঠি অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোকেও দেওয়া হয়। বাংলাদেশ গত শনিবার কোভ্যাক্সের কাছে টিকা নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছে।

সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভি কর্তৃপক্ষ সংশ্নিষ্ট দেশের আগ্রহপত্র ও অবকাঠামো পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে টিকা বিতরণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে টিকা প্রাপ্তির বিষয়ে জানানো হবে।

চিঠিতে আগামী মে মাসের মধ্যে এই টিকা প্রয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে জানুয়ারির মধ্যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা অনুমোদন করানোর শর্তের কথাও উল্লেখ করা হয়। কোভ্যাক্সের চিঠি পাওয়ার পরপরই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নিজেদের মধ্যে অন্য একটি বৈঠক করেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করা হয়। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা গ্রহণ করা হবে। এরপরই ফাইজারের টিকা পেতে কার্যক্রম শুরু করে সরকার।

বেসরকারি উদ্যোগেও আসছে টিকা :সরকারিভাবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা আসার কথা রয়েছে। এর মধ্যে আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রথম চালানে আসবে ৫০ লাখ ডোজ। এরপর প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে এসব টিকা আসবে।

ওই টিকা পেলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে সরকার টিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে চায়। দেশে অক্সফোর্ডের টিকার ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। এই প্রতিষ্ঠানটি বেসরকারিভাবেও সেরাম থেকে অক্সফোর্ডের টিকা আনতে যাচ্ছে। বেক্সিমকো ফার্মার চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা জানান, সরকারি টিকাদান কর্মসূচির বাইরে বেসরকারিভাবে বাজারে বিক্রির জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ডের টিকার প্রায় ৩০ লাখ ডোজ তারা আমদানির পরিকল্পনা করছেন। ১০ লাখ ডোজের জন্য ইতোমধ্যে সেরামের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এখন আরও ২০ লাখ ডোজ সংগ্রহের জন্য তারা পরিকল্পনা করছেন। বেসরকারিভাবে প্রতি ডোজ টিকার জন্য সেরাম ইনস্টিটিউটকে তারা আট ডলার করে পরিশোধ করবেন। বাজারে এই টিকার দাম এক হাজার ১২৫ টাকা পড়তে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, বেসরকারিভাবে টিকা আমদানি এবং তা ব্যবহারের জন্য একটি নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। দ্রুততম সময়ে এই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশের বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠাগুলো শর্ত সাপেক্ষে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত করোনাভাইরাসের টিকা আনতে পারবে। এর আগে এই টিকা আমদানি এবং তার প্রয়োগ নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করবে সরকার। বেসরকারিভাবে টিকা আনলেও তা সরকারের নীতিমালা মেনে প্রয়োগ করতে হবে।

করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ও আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার উদাহরণ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, প্রথমে সরকারিভাবে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হতো। পরে ধাপে ধাপে অনেকগুলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্যও বেসরকারি অনেক হাসপাতালকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। টিকাদানের ক্ষেত্রেও একইভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। তবে তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কারণ, যাদের টিকা দেওয়া হবে, তাদের নাম ঠিকানা সরকারি তথ্যকোষে যুক্ত করতে হবে, যাতে করে বিভ্রান্তির অবকাশ না থাকে। এ জন্যই নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে।

টিকাদানে দূতাবাসগুলোও উদ্যোগী: বাংলাদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলো নিজস্ব উদ্যোগে কর্মীদের পাশাপাশি বাংলাদেশে অবস্থানকারী তাদের নাগরিকদের টিকা দিতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীনসহ আরও কয়েকটি দূতাবাসের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে নিজ উদ্যোগে টিকা দেওয়ার কথা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করছে। একই সঙ্গে তাদের জন্য একটি পৃথক নীতিমালা তৈরিরও চিন্তাভাবনা চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, দূতাবাসগুলোর প্রস্তাবনা তারা পেয়েছেন। এখন কী প্রক্রিয়ায় তারা টিকা দিতে চান, সে সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। কারণ, টিকা অনুমোদনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এফডিএসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এর বাইরেও কয়েকটি দেশ জরুরি প্রয়োজনে অভ্যন্তরীণ অনুমোদন নিয়ে নিজ দেশের নাগরিকদের টিকা দিচ্ছে। ওইসব টিকার ক্ষেত্রে কী পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে, সে সম্পর্কেও চিন্তাভাবনা চলছে।

দূতাবাসগুলোতে টিকা প্রয়োগের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করার কথা উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, সেখানে টিকার ব্যবস্থাপনা কী হবে, বিশেষ করে টিকা কোথায় রাখা হবে, সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিস্কার নয়। ওই টিকাদান কার্যক্রম কারা করবেন, টিকা গ্রহণের পর কারও শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সে সম্পর্কেও কিছু জানানো হয়নি। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের জন্য একটি পৃথক নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। কী প্রক্রিয়ায় তারা টিকা আমদানি ও ব্যবহার করতে পারবেন, তা ওই নীতিমালায় থাকবে বলে জানান তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে