প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত হৃদযন্ত্র পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
বাবা-মায়ের অসুস্থতা কোনো সন্তানেরই কাম্য নয়। তবে বয়স বাড়লে অনেকেই অবুঝের মতো আচরণ করেন। বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দিলেও অনেক সময় বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা সময় মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে চান না। এই অবহেলা স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি নানান রোগ বাসা বাঁধতে পারে দেহে। যার একটি হল হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ।
আর বাবা-মায়ের হৃদযন্ত্রে কোনো অসুখ বাসা বাঁধছে কি-না তা বোঝার জন্য রয়েছে বেশ কিছু প্রাথমিক লক্ষণ।
এসব উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে পারলে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে চিকিৎসাবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানানো হল এরকম কিছু প্রাথমিক লক্ষণ।
উচ্চ রক্ত চাপ: রক্ত চাপ মাপার ‘ডিজিটাল মিটার’ এখন হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। ব্যবহার করাও সহজ। এরকম একটি যন্ত্র ঘরে রাখা উপকারী। উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা না থাকলেও বয়স পঞ্চাশের ওপর হলে প্রতি সপ্তাহে বা ১৫ দিন পর পর রক্ত চাপ পরীক্ষা করা উচিত। আর ইতোমধ্যে যাদের এই সমস্যা আছে তাদের প্রতিদিন পরীক্ষা করা জরুরি।
নিয়ন্ত্রণহীন রক্ত চাপ হৃদযন্ত্রে চাপ ফেলে যা থেকে হয় ‘হার্ট অ্যাটাক’।
রক্তে শর্করার মাত্রা: রক্তে উচ্চ মাত্রায় শর্করার উপস্থিতির কারণে ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে শরীরে রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে। যাদের ‘ডায়াবেটিস’ আছে তাদের হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিনিয়ত রক্তের শর্করার মাত্রা মাপা এবং নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
শ্বাস–প্রশ্বাসে সমস্যা: হৃদপিণ্ডের রক্ত ‘পাম্প’ করার ক্ষমতার সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাসের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। হৃদপিণ্ড ঠিক মতো রক্ত সরবরাহ করতে না পারলে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। তাই নিঃশ্বাসের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ‘হার্ট’ পরীক্ষা করাতে হবে।
বুকে ব্যথা: শুধু বয়স্করাই নয়, তরুণরাও বুকে ব্যথাকে গ্যাসের সমস্যা হিসেবে অবহেলা করেন। তবে বুকে যদি অস্বস্তিকর ব্যথা অনুভূত হয় বা চেপে ধরে তাহলে সেটা হতে পারে ‘হার্ট অ্যাটাক’য়ের লক্ষণ। ধমনীতে ‘ব্লক’ বা বাধা সৃষ্টি হলেও বুকে ব্যথা হয়। কাদাচিৎ এরকমও হয়েছে, কোনো ব্যথা অনুভূত হওয়া ছাড়াই হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বুকের যেকোনো অস্বস্তিকর ব্যথা দেখা দিলে অবশ্যই পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
উচ্চ কোলেস্টেরল: রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে ধমনীতে ‘প্লাক’ জমে হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে। তাই বয়োজ্যেষ্ঠ-সহ সকলেরই উচিত হবে কোলেস্টরলের মাত্রা ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করা। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসও গড়ে তুলতে হবে।
মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হওয়া: বাবা-মায়ের মাথা ঘোরা, ঝিমঝিম করার মতো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। মাথা ঘোরার পাশাপাশি অজ্ঞান হওয়া নির্দেশ করে স্বল্প রক্ত চাপের সমস্যা, অর্থাৎ হৃদপিণ্ড সারা দেহে যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করতে পারছে না।
গলা ও চোয়ালে ব্যথা: যদি বুকের ব্যথা গলা ও চোয়ালে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে ধরে নিতে হবে এটা ‘হার্ট অ্যাটাক’য়ের পূর্ব লক্ষণ। তাই দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
বমি, বিস্বাদ, হজমে সমস্যা: যদি কোনো কারণে বমি হওয়ার পর মুখের স্বাদ না ফেরে তবে সেটা হৃদযন্ত্রের সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতে হবে।
অতিরিক্ত ঘাম: কোনো বিশেষ কারণ ছাড়া বেশি ঘাম হওয়া হৃদযন্ত্রের সমস্যা নির্দেশ করে। এর অর্থ হৃদপিণ্ড দেহে ঠিক মতো রক্ত সরবরাহ করতে পারছে না।
পা, পায়ের পাতা, গোড়ালি ফোলা: হৃদপিণ্ড শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করতে না পারলে পা, পায়ের পাতা ও গোড়ালি ফুলে যেতে পারে। এই লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই হৃদযন্ত্র পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।