ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাইরের দেশগুলোতে সুইডেন এবং ডেনমার্ক, উভয় দেশই ৩০ লাখ কভিড-১৯ ভ্যাকসিন অনুদান দেবে। ইইউভুক্ত সব দেশগুলো এবছরের মধ্যে সম্মিলিতভাবে কমপক্ষে ১০ কোটি (১০০ মিলিয়ন) ভ্যাকসিন অনুদান হিসেবে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ মে) ব্রাসেলসে ইইউর শীর্ষ সম্মেলনে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লফভেন এই প্রতিশ্রুতি দেন।
এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ’সর্বপ্রথম আমরা সুইডেনের সব নাগরিককে কোনো ধরনের বিলম্ব ছাড়াই কভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেব। যেহেতু আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ভ্যাকসিন আমরা ক্রয় করেছি, তাই আমি ইইউকে জানিয়ে দিতে চাই যে, ইইউর যৌথ কমিটমেন্টের অংশীদার হিসেবে সুইডেন কমপক্ষে ৩০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন ইইউর বাইরের দেশগুলোতে পাঠাতে সক্ষম হবে’।
কোন ধরনের ভ্যাকসিন ইইউর বাইরের দেশগুলোকে দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি জবাব না দিয়ে বলেন, ’সুইডেনের নাগরিকদের ভ্যাকসিন দেওয়ার পরেও বেশ কিছু ডোজ উদ্বৃত্ত হিসেবে থেকে যাবে। সুতরাং এটা অত্যন্ত যৌক্তিক যে, আমরা উদ্বৃত্ত ডোজগুলো অবশ্যই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেব। কারণ পুরো বিশ্বকে টিকা দেওয়া দরকার। তবে ঠিক কোনটি এবং ঠিক কখন আমরা ভ্যাকসিনগুলো দিতে পারব, তা আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি’।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিক্সেনও একই পরিমাণের ভ্যাকসিন অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। ডেনমার্ক অ্যাস্ট্রা জেনিকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের কাছ থেকে কয়েক মিলিয়ন ডোজ ক্রয়ের জন্য অগ্রিম চুক্তি করেছে এবং কতগুলো ডোজ ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে তা এখনো পরিষ্কার না। তবে উল্লেখিত সংস্থার দু’টির ভ্যাকসিন সরকারি ’ডেনিশ ভ্যাকসিন প্রগ্রামের’ অন্তর্ভুক্ত নয় বলে জানা গেছে।
ইইউ দেশগুলির নেতারা ’আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন সহযোগিতা আওতাধীন-কোভ্যাক্স’ প্রজেক্টে যে ১০ কোটি ভ্যাকসিন ‘২০২২ সাল শুরু হওয়ার আগে’ অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সুইডিশ এবং ডেনিশ ডোজগুলো সেখানে একটি অংশ হিসেবে যোগ হবে। অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি এবং ফ্রান্স উভয় দেশই সাময়িকভাবে ঘোষণা করেছে যে, তারা প্রত্যেকে কোভাক্স প্রজেক্টের জন্য ৩ কোটি (৩০ মিলিয়ন) ডোজ অনুদান হিসেবে দেবে।
এ ব্যাপারে স্টকহোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব আমরিন জাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যাপারে কিছুদিন পূর্বে রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম সুইডেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ’যেহেতু সুইডেনসহ ইইউর অন্যান্য দেশের অনুদান দেওয়া ভ্যাকসিনগুলো কোভ্যাক্স প্রকল্পের অধীনে কোটা অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিতরণ করা হবে, সুতরাং বাংলাদেশ নিশ্চয়ই তাঁর অংশটি পাবেন।
তবে, কোটা অনুযায়ী বাংলাদেশ যাতে তার ভ্যাকসিনগুলো পায়, এব্যাপারে সুইডেন দৃষ্টি রাখবে বলে কথা দিয়েছেন সুইডেন সরকারের ঊর্ধ্বতন সেই কর্মকর্তা’ জানান আমরিন জাহান।
আমরিন জাহান আরো বলেন, গতকাল মঙ্গলবার যেহেতু ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লফভেন সুইডেনের পক্ষ থেকে ৩০ লাখ ভ্যাকসিনের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাই দূতাবাসের পক্ষ থেকে সুইডেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আবারো যোগাযোগ করা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার ব্রাসেলসে ইইউর শীর্ষ সম্মেলনে করোনার মহামারীর পরিস্থিতি ছিল অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়। সম্মেলনে ইউরোপীয় কাউন্সিল সারা বিশ্বব্যাপী কভিড -১৯ ভ্যাকসিনের ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সার্বিক প্রচেষ্টাকে আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁরা কোভ্যাক্সের নেতৃস্থানীয় ভূমিকার সমর্থন করে বলেন, এ ব্যাপারে বিশ্ব নেতাদের একটি যৌথ বিবৃতি কোভ্যাক্সের কাজ আরো তরান্বিত করবে।
ইইউর শীর্ষ সম্মেলনে করোনার পরিস্থিতি ছাড়াও সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লফভেন ও ইউরোপীয় সহকর্মীরা জলবায়ু পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করবেন। ইউরোপীয় কমিশন চলতি গ্রীষ্মকাল থেকে শুরু করে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ুতে ৫৫% কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বেশ কিছু নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করবেন বলে জানা যায়। ’সব দেশকে এ লক্ষ্য অর্জনে অবশ্যই অবদান রাখতে হবে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রাসেলসে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফান ল্যাভভেন বলেছেন, ’এ প্রশ্নে পিছিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই’।