নোংরা অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস?

0
780
Spread the love

করোনা মহামারির মধ্যে আরেক আতঙ্ক হিসাবে দেখা দিয়েছে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ নামে এক প্রকার ছত্রাক। ভারতে এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দ্রুত ও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।

ঘটেছে কয়েক হাজার মৃত্যু। প্রথমে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, তেলেঙ্গানায় দেখা দিয়েছিল সংক্রমণ। এরপর পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও এর দেখা মিলেছে।

ভারতে ইতোমধ্যে একে মহামারি ঘোষণা দিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

বিশেষ করে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত নোংরা অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ভেন্টিলেটরকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ছড়ানোর জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী : এটি ফাঙ্গাস বা ছত্রাকসৃষ্ট রোগ। প্রধানত করোনা আক্রান্তদের শরীরে দেখা দিচ্ছে এর সংক্রমণ। যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হচ্ছে মিউকোরমাইকোসিস।

ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রোগের চিকিৎসা না হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ফল, ফসল, উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষ; সবার মধ্যেই রোগটি দেখা দিতে পারে।

ফল, ফসল ও উদ্ভিদের কাণ্ডে বা পাতায় কালো কিংবা গাঢ় ধূসর ভুসির আস্তরণের মতো ছত্রাকগুলো লেগে থাকে। এক ধরনের বিশেষ ছত্রাক পরিবার থেকে মানুষের শরীরে রোগটি বাসা বাঁধে। এই ছত্রাক পরিবারের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০। পরিবারের নাম ‘মিউকোর’। ছত্রাকসৃষ্ট রোগকে বলা হয় ‘মাইকোসিস’।

এতে আক্রান্ত স্থানে কালো দাগ তৈরি হয়। আক্রান্তদের নাক থেকে শ্লেষ্মা মিশ্রিত কালো শক্ত পদার্থ বের হয়। এ কারণেই একে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাক রোগ বলা হয়। একজন সুস্থ মানুষ সাধারণত ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয় না।

রোগ বা কোনো বিশেষ চিকিৎসার কারণে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে মিউকোর গ্রুপের ছত্রাক কামড় বসানোর সুযোগ পায়।

শনিবার ভারত সরকার জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে ভারতে প্রায় নয় হাজার মানুষ ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের বেশির ভাগ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অথবা সুস্থ হয়েছে। সাধারণ ভারতে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ জনের মতো।

এটি কী সংক্রামক : এই রোগটি সংক্রামক নয়। এর অর্থ হলো এটি মানুষের সঙ্গে মানুষের সংস্পর্শে ছড়ায় না। কিন্তু ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বায়ুবাহিত রোগ।

ছত্রাকের বীজগুটি বা স্পোর বাতাসে ভেসে বেড়ায়। শ্বাস গ্রহণের সময় নাসারন্ধ্র দিয়ে সাইনাস ও ফুসফুসে প্রবেশ করে। এ কারণে এ দুটি স্থান বেশি আক্রান্ত হয়।

এ ছাড়া পরিপাকতন্ত্রেও এ ছত্রাক প্রবেশ করে রোগ বাঁধাতে পারে। ত্বকে কাটা, ক্ষত বা পোড়া ঘা থাকলে সেগুলোও মিউকর ছত্রাকের প্রবেশপথ হিসাবে কাজ করে।

এ ছাড়া দেহের দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার সুযোগেও ছত্রাকটি শরীরে প্রবেশ করে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতাল নারায়ণ নেত্রালয়ের প্রধান কে বুজাঙ্গ শেট্টি বলেন, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস আমাদের শরীরে থাকে। কিন্তু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু ক্যানসার, ডায়াবেটিস বা স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলে যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় তখন এগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠে ও গুণিতক হারে বাড়তে থাকে।

এটি কী অপরিচ্ছন্ন সিলিন্ডার ও ভেন্টিলেটর দিয়ে ছড়ায় : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিচ্ছন্ন বা নোংরা পরিস্থিতি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

মুম্বাইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালের চিকিৎসক নিশান্ত কুমার বলেন, অক্সিজেনের জন্য ব্যবহৃত পাইপ, সিলিন্ডার ও হিউমিডিফাইয়ারে অনেক দূষণ থাকে। কারও যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয় এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য এসব পাইপ ও অক্সিজেন ব্যবহার করেন তাহলে এই সংক্রমণ ছড়ানোর বড় সুযোগ তৈরি হয়।

কিন্তু এটি নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। মহারাষ্ট্রের মহাত্মা গান্ধী ইনস্টিটউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের সিনিয়র ডাক্তার ও গবেষক এসপি কালান্ত্রি বলেন, এপ্রিলের আগেও হাসপাতালগুলো অপরিচ্ছন্ন ছিল। আমাদের এপিডেমিওলজিক্যাল গবেষণা প্রয়োজন কেন এখন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে