অবশেষে দেশে প্রথমবারের মতো চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা মানুষের শরীরে পরীক্ষার (হিউম্যান ট্রায়াল) জন্য অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)। গতকাল বুধবার বিএমআরসির পরিচালক অধ্যাপক ডা. রুহুল আমীন স্বাক্ষরিত এ অনুমোদনের চিঠি আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ড. ফেরদৌসী কাদরী বরাবর পাঠানো হয়েছে।
তবে দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের টিকা বঙ্গভ্যাক্সকে এখনো সরাসরি মানুষের শরীরে পরীক্ষার (হিউম্যান ট্রায়াল) অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাদের আরো কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জানানোর জন্য গত মঙ্গলবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। গ্লোব বায়োটেকের টিকার প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলকে ওই চিঠি দিয়েছেন বিএমআরসির পরিচালক। অন্যদিকে ভারতের ভারত বায়োটেকের ক্ষেত্রেও অনুমোদনের বিষয়টি এখনো পরিষ্কার হয়নি।
গতকাল তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের অনুমোদন পাওয়া চীনের টিকার উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল বায়োলজি অব দ্য চায়নিজ একাডেমি অব মেডিক্যাল সায়েন্স (আইএমবি ক্যামস)। বাংলাদেশে ওই চীনা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশক ওয়ান ফার্মা নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর আগে গত সপ্তাহে এই তিন টিকার ট্রায়ালের ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদনের কথা জানানো হলেও পরে বিএমআরসি থেকে নিজেরাই আবার তা অস্বীকার করেছিল।
তবে গতকাল বিএমআরসির পরিচালক অধ্যাপক ডা. রুহুল আমীন চীনের ওই টিকার ট্রায়ালের অনুমোদনপত্র দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেককে কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো পূরণ করে জানানোর পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসবে। এ ক্ষেত্রে গ্লোব বায়োটেকের টিকা মানুষের শরীরে প্রয়োগের আগে বানর বা শিম্পাঞ্জিজাতীয় প্রাণীর শরীরে প্রয়োগ করে তার ফলাফল জমা দিতে বলা হয়েছে।
আইসিডিডিআরবি সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরে আইএমবি ক্যামসের সঙ্গে তাদের ট্রায়ালের জন্য চুক্তি হয়। চুক্তির আগে সরকারের কাছ থেকে তারা প্রাথমিক প্রয়োজনীয় অনুমতিও নেয়। এর পরই তারা বিএমআরসির কাছে ট্রায়ালের জন্য আবেদন করে।
এদিকে দেশে সবার আগে এবং সবচেয়ে বেশি প্রয়োগকৃত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে নিয়ে আসা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সংকট কবে কাটবে তা এখনো অনিশ্চিতই রয়ে গেছে। যদিও প্রতিদিনই স্বল্প পরিসরে এই টিকার দ্বিতীয় ডোজ এখনো চলছে বিভিন্ন কেন্দ্রে। হাতে আছে মাত্র কয়েক হাজার ডোজ টিকা। এ ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে চুক্তির আওতায় চলতি জুন মাসের মধ্যে তিন কোটি ডোজ টিকা সেরাম থেকে পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সরকার পেয়েছে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ। বাকি দুই কোটি ৩০ লাখ ডোজ পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে জুনে এই চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে পরবর্তী সময়ে এই চুক্তি আর নবায়ন করা হবে কি না বা নবায়ন না করা হলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে কি না কিংবা করণীয় কী তা নিয়েও নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নিয়েও কথা বলছেন বিভিন্ন পর্যায় থেকে।
গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী টিকা দিতে ব্যর্থ হলে অবশ্যই টাকা ফেরত দিতে হবে।
এদিকে ভারতীয় সূত্রগুলো জানায়, জুলাই মাসের শেষে বা আগস্ট মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আবারও কভিড টিকা পাঠানো শুরু করতে পারে ভারত। ভারতীয় দূতরা প্রতিবেশী দেশগুলোকে টিকা পাঠানো আবারও শুরু করার বিষয়ে আশ্বাস দিয়ে আসছিলেন। কভিড পরিস্থিতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর দিকেই দৃষ্টি দিয়েছিল ভারত। এপ্রিল মাস থেকে ভারত বিদেশে টিকা রপ্তানি বা উপহার হিসেবে পাঠানো বন্ধ রেখেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার মনে করছে, ভারত যদি এখন দৈনিক রেকর্ড পরিমাণ মানুষকে টিকা দেওয়া অব্যাহত রাখতে পারে তবে আগামী আগস্ট মাস নাগাদ অন্য দেশে টিকা রপ্তানি শুরু করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলো।