সময়ের সাথে সাথে বয়স বাড়তে থাকে। শরীর তখন আর দৈর্ঘ্যে বাড়ে না। বাড়তে থাকে প্রস্থে। অল্প পরিশ্রমেই শরীর হাঁসফাঁস করতে শুরু করে, ক্লান্তি এসে ভর করে। তখনই শুরু হয় শরীরচর্চা, খাবারদাবারে নিয়ন্ত্রণ। তখন একটি প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দেয়, আর সেটা হলো– রাতে কী খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে বা কমবে, সেটা কী ভাত, না রুটি?
অনেকেই মনে করেন ওজন বৃদ্ধির পেছনে একটি কালপ্রিটই দায়ী, আর তা হলো ভাত। বিশেষ করে রাতে ভাত খেলেই নাকি চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে শুরু করে ভুঁড়ি। সেই তুলনায় নাকি রুটি খেলে ওজন সেভাবে বাড়ে না। এখানেই শেষ নয়, রাতে রুটি খেলে ওজন ঝরতেও শুরু করে! সত্যিই কি এমনটা হয়, রাতে ভাত খেলে কি সত্যিই ওজন বাড়ে? আর রুটি খেলে ওজন কমে? চলুন জেনে নেওয়া যাক-
৩০ গ্রাম চাল থেকে এনার্জি পাওয়া যায় ১০২.১ ক্যালরি। এবং ৩০ গ্রাম আটার রুটিতে ক্যালরি মেলে ৯৬.৪ ক্যালরি। এবার দেখা যাক, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন এবং খনিজের পরিমাণ ভাত ও রুটিতে কতটুকু আছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম চালে রয়েছে ৮ গ্রাম প্রোটিন, ০.৬ গ্রাম ফ্যাট, ৭৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৩৬ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ০.৫ মিলিগ্রাম আয়রন, ফাইবার ২.২ গ্রাম। এবং প্রতি ১০০ আটায় আছে ১৩ গ্রাম প্রোটিন, ১.৩ গ্রাম ফ্যাট, ৫৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩৫৭ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৩.৬০ মিলিগ্রাম আয়রন ও ফাইবার ১০.৭ গ্রাম।
উপরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সমপরিমাণ ভাত ও রুটির মধ্যে এনার্জিগত বা ক্যালরিগত তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তফাৎ নেই কার্বোহাইড্রেটের মাত্রাতেও। তাই রাতে ভাতই খান বা রুটি, ওজন একই রকম বাড়ার সম্ভাবনা আছে।
তবে রুটির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ভাতের তুলনায় কম। গমের রুটির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৬২ এবং ভাতের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৭৩। অর্থাৎ ভাত খুব দ্রুত বিপাকক্রিয়ায় ভাঙে ও গ্লুকোজ শরীরে মুক্ত করে। রুটিতে ফাইবার থাকায় সুগার মুক্ত হতে বেশি সময় লাগে। পাশাপাশি ফাইবার থাকায় রুটি খেলে দীর্ঘসময় পেট ভর্তি থাকায় ক্ষুধা কম অনুভূত হয়। দ্রুত খিদে পায় না এবং অতিরিক্ত খাদ্য খাওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না।
আর অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীরে ফ্যাট হিসেবে সঞ্চিত হয়। যেখানে ফাইবার বেরিয়ে যায়। এ কারণেই অনেকে ওজন কমানোর উপায় হিসেবে খাদ্যতালিকায় রুটিকে এগিয়ে রাখেন। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত রুটির গ্লুকোজও কিন্তু শরীরে ফ্যাট হিসেবে জমতে থাকে। তাই ভাত অথবা রুটি দুটিই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। রুটি খেলে কয়েকদিনের মধ্যে মোটা থেকে শুকিয়ে যাবেন, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।