প্রস্রাবে সংক্রমণ হলে করণীয়

0
325
Spread the love

কিডনি বা প্রস্রাবসংক্রান্ত যেসব নৈমিত্তিক সমস্যা আমাদের ভোগান্তিতে ফেলে, তার মধ্যে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা সোজা ভাষায় ইউরিন ইনফেকশন উল্লেখযোগ্য।

হিসাব করে দেখা যায়, রোগীদের মধ্যে আনুমানিক শতকরা তিনজন প্রস্রাবের ইনফেকশনে ভুগে থাকে। একটু সচেতন হলে এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

প্রস্রাব যে পথে তৈরি ও নিঃসরণ হয়, তার ইনফেকশন বা প্রদাহই হলো প্রস্রাবে সংক্রমণ বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন। সে হিসেবে এ রোগ মানে কিডনি, ইউরেটার, মূত্রথলি ও মূত্রনালির ইনফেকশন বোঝায়।

যদিও মানুষ বেশি আক্রান্ত হয় মূত্রথলি ও মূত্রনালির ইনফেকশনে, যাদের যথাক্রমে সিস্টাইটিস ও ইউরেথ্রাইটিস বলে। জটিল অবস্থায় ইনফেকশন কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে, যাকে পাইলোনেফ্রাইটিস বলে।

কাদের বেশি হয়:

ইউরিন ইনফেকশন সাধারণত মূত্রনালি থেকে ওপরে কিডনি পর্যন্ত ছড়ায়। নারীদের মূত্রনালি লম্বায় অপেক্ষাকৃত ছোট এবং অবস্থান পায়ুপথের কাছাকাছি হওয়ায় পুরুষদের তুলনায় নারীদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন:

  • ডায়াবেটিস রোগী
  • মূত্রপথের কোথাও সরু অথবা বন্ধ হয়ে যাওয়া বা জন্মগত গঠনমূলক সমস্যা যাঁদের আছে
  • যাঁরা অতিরিক্ত ব্যথার ওষুধ খান
  • যেসব নারীর মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে
  • যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম
  • যাঁদের ইউরিনারি ক্যাথেটার ব্যবহার করতে হয়
  • কিছু বিশেষ জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি, যেমন ডায়াফ্রাম, জেল গ্রহণ করেছেন যাঁরা।

লক্ষণ :

  • প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করা
  • বারবার প্রস্রাবের চাপ আসা, কিন্তু প্রস্রাব করার পরও মূত্রথলি ভরা থাকার অনুভূতি হওয়া
  • ঘোলাটে প্রস্রাব হওয়া, যা রেখে দিলে তলানি পড়ে
  • দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হওয়া
  • গাঢ় রঙের (লাল, কালো) প্রস্রাব হওয়া
  • তলপেটে ব্যথা হওয়া
  • বমিভাব বা বমি হওয়া।

প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

  • প্রতিদিন কমপক্ষে ২-৩ লিটার পানি পান করা, যাতে দৈনিক দুই-তিনবার ঈষৎ হলুদ প্রস্রাব হয়
  • ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
  • প্রস্রাব আটকে না রাখা
  • সহবাসের আগে ও পরে প্রস্রাব করা
  • প্রয়োজনবোধে জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি পরিবর্তন করা
  • সম্ভব হলে ক্র্যানবেরি জুস পান করা

পরীক্ষা:

  • প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা
  • প্রস্রাব কালচার টেস্ট
  • আলট্রাসনোগ্রাফি
  • প্রয়োজনবোধে সিটি স্ক্যান ও এমআরআই

চিকিৎসা:

সাধারণত রোগবাহী জীবাণু চিহ্নিত করে তার বিপরীতে কর্মক্ষম অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। অপর্যাপ্ত ও ভুল চিকিৎসা উল্টো বিপদ ডেকে আনতে পারে।

  • চিকিৎসা না করা বা অপচিকিৎসার জটিলতা
  • বারবার আক্রান্ত হওয়া
  • আরও জটিল জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়া
  • মূত্রনালি সরু অথবা বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে কম ওজনের এমনকি মৃত বাচ্চা প্রসব হওয়া
  • কিডনি নষ্ট হওয়া
  • রক্তে জীবাণু ছড়িয়ে জীবননাশী ইনফেকশন

লেখক: রেসিডেন্ট, নেফ্রোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে