কান টানাটানি না করে মাথা টানতে হবে — ড. ইফতেখারুজ্জামান

0
844
Spread the love

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দুর্নীতিবাজ যে উচ্চ পর্যায়ের বা নিম্ন পর্যায়েরই হোক না কেন কেউ এককভাবে দুর্নীতি করে না। আটক গাড়িচালক যে পর্যায়ের চাকরিজীবী তার পক্ষে এত সম্পদ অর্জন করা অসম্ভব। কাজেই তার সম্পদ অর্জন যে অবৈধ পন্থায় এটা অত্যন্ত পরিষ্কার। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই দুর্নীতি তিনি এককভাবে করেননি। একই কথা অন্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এটা সেবা খাতের সরাসরি ঘুষ লেনদেনের বিষয় নয়। এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এর আলামত ইতিমধ্যে কিছুটা প্রকাশ পেয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এখন এই দুর্নীতির সঙ্গে যে বা যারা সরাসরি জড়িত তাদেরকে তো অবশ্যই জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। পাশাপাশি একক জবাবদিহিতার মাধ্যমে কার্যকর কোনো ফল পাওয়া যাবে না। এই দুর্নীতির সঙ্গে তার সহযোগীদের বিশেষ করে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ এই দুর্নীতি তিনি করতে পারতেন না যদি মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ না থাকত। কাজেই শুধু কান নিয়ে টানাটানি করলে হবে না, মাথা টানতে হবে। তিনি বলেন, ড্রাইভার রাঘববোয়ালের মতো সম্পদ আহরণ করলেও তিনি অবস্থানগতভাবে চুনোপুঁটি। তার পেছনে ছিল রুই-কাতলারা। তাদেরকেও চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এটা করা ছাড়া দুর্নীতির লাগাম টানা সম্ভব হবে না।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতির রাঘববোয়াল বা রুই-কাতলা কাউকেই বিচারের আওতার আনার দৃষ্টান্ত আমাদের এখানে নেই। সেটা স্বাস্থ্য খাতেই হোক, ব্যাংকিং খাতেই হোক, ঋণ খেলাপিই হোক, জালিয়াতই হোক বা সেবা খাতের হোক। বড় দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা কখনই নেওয়া হয় না। সেটা বেসিক ব্যাংকের কেলেঙ্কারি বা অন্য যেখানেই হোক। সংসদীয় কমিটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দুর্নীতি প্রমাণ হলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটা শুধু একটা উদাহরণ। তিনি বলেন, আসলে এ ধরনের দুর্নীতির রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় সমাজে এক ধরনের বার্তা চলে যায় যে, দুর্নীতি করলে আসলে কিছু হয় না। তখন রাঘববোয়ালদের দুর্নীতির মহোৎসব দেখে চুনোপুঁটিরা ভাবে, আমরা আর কম যাই কেন। এভাবেই অনিয়ম দুর্নীতির বিকাশ ঘটেছে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালকের ধরা পড়া কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ ধরনের দৃষ্টান্ত আরও আছে। খতিয়ে দেখলেই আরও অনেক ধরা সম্ভব হবে। ঢাকা শহর ও দেশের বিভিন্ন স্থানের জমি এবং সম্পদের মালিকানার নেপথ্য খুঁজে দেখলেই এদের ধরা সম্ভব। এদেরকে ব্যাপকহারে চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে