অনেক রোগী আসেন, যাদের হাত ও পা অবশ। কারও দুই পা অবশ থাকে; কেউ হাত নাড়াতে পারেন না অথবা একদিকে নাড়াতে পারেন। এসব উপসর্গের সাথে মেরুদণ্ডের টিউমারের সংযোগ নির্ভর করে টিউমারের অবস্থান ও উৎসের ওপর।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়েছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৌমিত্র সরকার।
রোগীর দুই হাত, দুই পা দুর্বল বা হালকা অবশ হলে কোয়াড্রি প্যারিসিস এবং পুরো অবশ হয়ে গেলে, সেটিকে কোয়াড্রি-প্লেজিয়া বলা হয়। কোয়াড্রি মানে চার হাত-পায়ে সমস্যা। কারও চার হাত-পায়ে সমস্যা হলে, টিউমারটা অবশ্যই সারভাইক্যাল রিজিওনে এবং সেখানে স্পাইনাল কর্ডে কমপ্রেশন হচ্ছে। এই কমপ্রেশন নার্ভ রুটে হলে চার হাত-পায়ে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অর্থাৎ সারভাইক্যাল রিজিওনে স্পাইনাল টিউমার হলে ধীরে ধীরে হাত-পা দুর্বল হয়ে যায়। এ দুর্বলতা প্রগ্রেসিভ। হঠাৎ করে দুর্বল হয় না।
আবার কোনো রোগীর একটি হাত অবশ হয়ে গেলে সেটি স্পাইনাল টিউমারের জন্যই হয়েছে, এমন নয়। এটি অনেক সময় সারভাইক্যাল ডিস্ক প্রোল্যাপ্সের জন্যও হতে পারে। অর্থাৎ ব্যাথা থেকে প্রগ্রেসিভ দুর্বলতা দেখা দিলে বুঝতে হবে, সারভাইক্যাল রিজিওনে একটা নার্ভ রুটে কমপ্রেশন হয়েছে, স্পাইনাল কর্ডে কিছু হয়নি।
কোনো রোগীর দুই পা দুর্বল হয়ে যায় এবং পায়ে স্টিফনেস দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে স্পাইনাল কর্ডে থোরাসিক রিজিওনে কোনো সমস্যা হয়েছে। হাঁটতে গেলে পা দুর্বল হয়ে যাওয়া, শক্ত হয়ে যাওয়া এবং স্টিকি হয়ে যাওয়াকে আমরা আপার মটর নিউরন সাইন বলে থাকি।
আর যদি দেখা যায়, দুই পা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এবং ফ্ল্যাসিড মানে শক্ত বা স্টিফ হচ্ছে না এবং পায়খানা-প্রস্রাবের সমস্যা হচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে এটা নার্ভ রুটে কোডা ইকুইনা রিজিওনে কোনো টিউমার ডেভেলপ করেছে। এভাবে উপসর্গের মাধ্যমে টিউমারের উৎস, অবস্থান ও ধরণ বোঝা যায়।
চিকিৎসায় করণীয়
রোগীর দুই পা অবশ এবং প্রস্রাব-পায়খানা বন্ধকে মেডিকেল টার্মে ‘কওডা ইকুইনা’ সিনড্রোম বলা হয়। এটিকে সাধারণত সার্জিক্যাল ইমারজেন্সি হিসেবে ধরা হয়। কওডা ইকুইনা সিনড্রোম টিউমারের জন্যই হোক, পিএলআইডির জন্যই হোক অথবা ভার্টিব্রাল কোনো ইনজুরির জন্যই হোক, দ্রুত সেটি সারাতে হবে। সাধারণত বলা হয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করলে সবচেয়ে ভালো। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই এটিকে রিলিফ করা গেলে কওডা ইকুইনাগুলো তার নরমাল ফাংশন ঠিকমতো ফিরে পাবে।
কওডা ইকুইনা সিনড্রোমেও অপারেশন করা যাবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে দেখা যায়, কিছু নিউরাল ডেফিসিট থেকে যায়। তবে এ টিউমারগুলো যেহেতু হঠাৎ ডেফিসিট করে না, সেজন্য অনেক দিন কওডা ইকুইনা সিনড্রোম থেকে থাকলেও টিউমারগুলো বের করে দেওয়া গেলে সেগুলো আবার আগের ফর্মে বা নরমাল ফাংশনে ফিরে আসবে।
তবে সমস্যা হয় যখন পিএলআইডি বা অন্য যে কারণেই হোক একিউটলি কওডা ইকুইনা সিনড্রোম ডেভেলপ করলে। যেমন, হঠাৎ করে নার্ভ ড্যামেজ হয়ে দুই পা অবশ কিংবা ব্লাডার বোওয়েল ইনভলভ হয়ে যায়। এসব রোগীদের ক্ষেত্রে অপারেশনের পর কিছু ডেফিসিট থেকে যায়। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে আস্তে আস্তে ডেভেলপ করছে, ইউরিনারি ব্লাডার বা বাওয়েল ডিসফাংশন হচ্ছে, উইকনেস ডেভেলপ করছে, এসব ক্ষেত্রে অনেক দিন পরে অপারেশন করলেও ফাংশনগুলো আবার নরমাল ফর্মে ফিরে আসে। সুতরাং অপারেশনই হচ্ছে স্পাইনাল টিউমারের চিকিৎসা।