গুরুতর অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান এক নার্স। সেখানে মেডিসিন বিভাগে তাকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, জরুরি ভিত্তিতে তাকে রক্ত দেওয়া প্রয়োজন। হাসপাতালের দোতলায় ব্লাড ব্যাংকের সামনে কয়েকজনকে বসে থাকতে দেখে তাদের কাছেই সাহায্য চান ওই নারী। তখন মনোয়ার হোসেন সজীব নামে এক ব্যক্তি তাকে ‘ও-পজেটিভ’ গ্রুপের রক্ত সংগ্রহ করে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। এর পরদিন কৌশলে মিরপুরের মধ্য মণিপুর এলাকার এক বাসায় নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে সজীব। গত ১৬ সেপ্টেম্বর এ ঘটনার পর বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য তাকে হুমকিও দেওয়া হয়। ভয়ে-লজ্জায় তা গোপন রেখেছিলেন তিনি। তবে গত বৃহস্পতিবার আবারও ধর্ষণের শিকার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে তিনি স্বামীকে বিষয়টি জানান। একপর্যায়ে এই দম্পতি র্যাবের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন।
র্যাব-২ এর সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এএসপি আবদুল্লাহ আল মামুন সমকালকে বলেন, ধর্ষণে অভিযুক্ত মনোয়ার হোসেন সজীব ও তাকে সহায়তাকারী মাশনু আরা বেগম শিল্পীকে শুক্রবার রাতে মিরপুরের মধ্য মণিপুরের শিফা ভিলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৪৩ বছর বয়সী সজীব দুশ্চরিত্র স্বভাবের লোক। ঢাকায় তার নিজের বাড়ি আছে। সে প্রাইভেট টিউটর হিসেবে কাজ করে। শেয়ারবাজারেও তার বিনিয়োগ আছে। আর শিল্পী পেশাদার যৌনকর্মী। সজীবের সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ঘটনার দিন ধর্ষণে সহায়তার বিনিময়ে সে ৫০০ টাকা পেয়েছে।
র্যাব-২ সূত্র জানায়, সাতক্ষীরার একটি ক্লিনিকে নার্স হিসেবে কাজ করেন ধর্ষণের শিকার নারী। তার স্বামী বেশ কিছুদিন ধরে পাইলস ও অন্যান্য অসুখে ভুগছেন। তাকে নিয়মিত রক্ত দিতে হয়। অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে নিয়ে ঢাকায় আসেন ওই নারী। এখানে তার পরিচিত বিশেষ কেউ নেই। তাই রক্ত সংগ্রহের জন্য তিনি উপস্থিত অন্যদের কাছে সহায়তা চান। একই হাসপাতালে সজীবের মায়েরও চিকিৎসা চলছে। সে ওই নারীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে তাকে রক্ত সংগ্রহ করে দেওয়ার কথা বলে। এরপর শিল্পীকে ফোন করে এই অপকর্ম সংঘটনের পরিকল্পনা করে। পরদিন রক্ত সংগ্রহ করে দেওয়ার নাম করে শিল্পীর বাসায় নিয়ে নার্সকে ধর্ষণ করে সজীব। ভুক্তভোগী চিৎকার করলে গলা চেপে ধরে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। পরে সে এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহও করে দেয়। এরপর বৃহস্পতিবার সজীব ওই নারীর স্বামীকে ফোন করে জানায়, আরও এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। তার স্ত্রী যেন গিয়ে তা নিয়ে আসেন। তবে ভুক্তভোগী এবার যেতে আপত্তি করেন। এক পর্যায়ে তিনি স্বামীকে সেদিনের ঘটনা খুলে বলেন এবং রক্ত আনতে গেলে আবারও ধর্ষণের শিকার হতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তখন তারা পরামর্শ করে র্যাব-২ এর অধিনায়ক বরাবর অভিযোগ জানান। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। এরপর আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযানে নামে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে সজীব ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় মিরপুর থানায় মামলা হয়েছে।
সূত্রঃ সমকাল