বাংলাদেশের অনুমোদন পেতে দেরি হওয়ায় অন্য দেশে মানবদেহে ভ্যাকসিন ট্রায়াল শুরু করেছে চীনের কোম্পানি সিনোভ্যাক। অন্য দেশে বরাদ্দ করায় বাংলাদেশে ট্রায়ালের ক্ষেত্রে ‘অর্থনৈতিক ক্রাইসিস’ এর কথা জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে ‘কো-ফান্ডিং’ করার জন্য অনুরোধ করেছে কোম্পানিটি। সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় বাংলাদেশের হাতছাড়া হলো বিনামূল্যের এই ভ্যাকসিন।
আগে ট্রায়ালের অনুমোদন দিলে এবং সফল হলে এই ভ্যাকসিনের ডোজের একটি বড় অংশ বিনামূল্যে পেত বাংলাদেশ। এখন মানবদেহে ট্রায়াল করতে গেলেই গুনতে হবে অর্থ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানি তাদের আর্থিক সংকটের কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে। সেখানে কোম্পানিটি তাদের ‘অর্থনৈতিক ক্রাইসিস’-এর কথা জানিয়ে করোনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালে বাংলাদেশ সরকারকে ‘কো-ফান্ডিং’ করার জন্য অনুরোধ করেছে। কারণ হিসেবে তারা চিঠিতে বলেছে, বাংলাদেশ থেকে অনুমোদন পেতে দেরি হয়েছে তাদের। গত সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার কথা থাকলেও পরে হয়নি।
গত ১৯ জুলাই চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানির ভ্যাকসিন করোনাভ্যাককে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)। এরপর সিনোভ্যাককে ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে গত ২১ সেপ্টেম্বর জানান স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান। কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও একাধিকবার দেশে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের কথা বলেছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে দেওয়া চিঠিতে সিনোভ্যাক বলেছে, ‘আমাদের কাছে যে ফান্ড ছিল তা অন্যান্য দেশে ট্রায়ালের জন্য বিতরণ করা হয়েছে এই মুহূর্তে। তাই বাংলাদেশে ট্রায়াল করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আমাদের হাতে নেই। আমরা এই তহবিল অক্টোবরের শেষে কিংবা নভেম্বরের প্রথম ভাগে কিছুটা সংগ্রহের পরিকল্পনা করছি। যদিও বাংলাদেশে ট্রায়াল পরিচালনার জন্য আমাদের তহবিল গঠনের যৌথ অংশীদার প্রয়োজন।’
ট্রায়াল শুরুর বিষয়ে সিনোভ্যাক জানিয়েছে, ‘আমাদের প্ল্যান ছিল আগস্টের শুরুতে ট্রায়াল শুরু করার, কিন্তু অনুমোদন পেতে দেরি হওয়ায় আমাদের ফান্ড অন্য দেশে ট্রায়ালের জন্য দিয়ে দিই। একই সঙ্গে আমরা চূড়ান্ত অনুমোদন পাব কিনা তা নিয়েও অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলাম। বাংলাদেশে ট্রায়াল করার সদিচ্ছা ও এক্সটারনাল এজেন্সির পরামর্শে আমরা দ্য কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস-সেপির কাছ থেকে তহবিলের জন্য আবেদন করেছি। আমাদের এক্সটারনাল এজেন্সি তহবিলের বিষয়ে আশা দেখালেও দুই সপ্তাহ আগে সেপি আমাদের জানায় যে তারা সহায়তা করতে পারবে না।’ সিনোভ্যাক অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দেরি করেছে কেন, জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের কথা তারা বলতে পারে। আমাদের ফর্মালিটিজ রয়েছে, বুঝেশুনে দিতে হবে। আর যখনই এটা হয়েছে, তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি তো জটিল নয়। ট্রায়ালে যদি অবস্থা ভালো হয়, তাহলে আমরা ওই টিকা নেব। ভালো না হলে নেব না। তাই সিনোভ্যাকের ট্রায়াল দিতে আমরাও সুপারিশ করেছিলাম পরামর্শক কমিটি থেকে।’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘এগুলো অপ্রয়োজনীয় কালক্ষেপণ। যখন গবেষণার বিষয়ে আইসিডিডিআর,বির মতো আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকে, সেক্ষেত্রে প্রশাসনিকভাবে দেখার তেমন কিছু ছিল না। দেশে গবেষণার ক্ষেত্রে যেখানে মানুষ জড়িত থাকে সেখানে বিএমআরসি সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। বিএমআরসি যেখানে অনুমোদন দিয়েছে সেখানে মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরের কিছু বলার নেই, দরকার ছিল না। ট্রায়াল হলেও এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশ নেবে কিনা তার পুরোটাই আমাদের এখতিয়ার ছিল, তারা কিছু বলতে পারত না। এই সুযোগ হারানো খুবই দুঃখজনক’।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন