শীতকালীন স্বাস্থ্য সতর্কতা

0
133
Spread the love

প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা স্পষ্ট- ভোররাতের ঠান্ডা, দিনের মধ্যভাগের তুলনামূলক গরম আবার সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশাসহ মৃদু ঠান্ডা। দেশের কোথাও অল্প শীত আবার কোথাও হাড় হিম করা কনকনে ঠান্ডা! আবহাওয়ার বর্তমান এ অবস্থা রোগ-বালাইয়ের বিস্তারের জন্য একেবারে আদর্শ।

ঋতু পরিবর্তনের ফলে সারাদিনে  তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, আর ধুলাবালির তারতম্যে নানারকম অসুখ-বিসুখের সম্ভাবনা বাড়ে, যেগুলোর বেশিরভাগই ভাইরাসজনিত, সাময়িক, কিন্তু অস্বস্তিকর। এসময়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীরা।

অনেকে ভাইরাসজনিত ঠান্ডা-জ্বর, সাধারণ সর্দি-কাশি, টনসিলাইটিস, অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ আর্র্থ্রাইটিস বা বাত-ব্যথার মতো ঠান্ডাজনিত কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে দিনগুলো খুব কষ্টে অতিবাহিত করেন। তবে সাধারণ কিছু স্বাস্থ্য-সতর্কতা অবলম্বন করে শীতকালীন এসব সমস্যা থেকে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব।

ঠাণ্ডা যেন না লাগে-

এ সময়টাতে খুব সহজেই ঠান্ডা লেগে যায়। তাই শীত উপযোগী কাপড় পরিধান করতে হবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠে হঠাৎ ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা বেশি থাকে, সেজন্য সকাল-সন্ধ্যায় কান-ঢাকা টুপি, মোজা এবং গলায় মাফলার ব্যবহার করা উচিত। ঘরের বাইরে এবং ভিতরে আলাদা জুতা/স্যান্ডেল ব্যবহার করা ভালো। প্রয়োজনে রুম হিটার ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে লম্বা সময় ধরে রুম হিটার ব্যবহার করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। সম্ভব হলে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ঘর থেকে বাইরে বের না করাই উত্তম।

কমন কোল্ড থেকে মুক্ত থাকুন-

ঋতু পরিবর্তনের সময় বিশেষ করে শীতের শুরুতে তাপমাত্রা পরিবর্তনের সময় এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। প্রায়ই দেখা যায় দুই-তিন দিন নাক বন্ধ থাকে বা নাক দিয়ে পানি ঝরে। গলা ব্যথা করে, শুকনো কাশি থাকে, জ্বরও থাকতে পারে। এগুলো বেশিরভাগই ভাইরাসজনিত এবং অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ও অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। আলাদা কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন হয় না।

গলাব্যথা এবং খুসখুসে কাশি দূর করতে গরম পানিতে একটু লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করতে হবে। গরম গরম চা বা আদা, লেবুর রস, তুলসীপাতা মেশানো গরম পানীয়, কফি কিংবা গরম দুধ বেশ কার্যকর। কুসুম গরম পানিতে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে তা কাশি থেকে গলাকে যথেষ্ট আরাম দেয়। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মধু একেবারেই নিষেধ। সর্দি-কাশির উপসর্গ কমাতে ধুলাবালির সংস্পর্শ যতটা পারা যায় এড়িয়ে চলতে হবে।

ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচুন-

শীতে জ্বর, সর্দি-কাশিসহ নানা ধরনের ভাইরাসজনিত রোগের বিস্তার ঘটে। হাঁচি-কাশি ও সংস্পর্শের মাধ্যমে ভাইরাস একজন থেকে অন্যজনের শরীরে বিস্তার ঘটে। তাই নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস করা উচিত। বাথরুমে যাওয়ার পর, খাওয়ার আগে ও পরে বিশেষ করে চোখ বা নাক পরিষ্কারের পর নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের বাড়তি সতর্কতা-

শীত জেঁকে বসার আগেই হাঁপানির রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রতিরোধমূলক ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের প্রকোপ এই সময় বাড়ে বলে রোগীদের খুব ঠান্ডা আবহাওয়ায় বাইরে না যাওয়াই উত্তম। শিশুদের অ্যাজমা প্রতিরোধে অবশ্যই ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।। তাই সতর্ক হতে হবে।

লেখক :

 ডা. অভিষেক ভদ্র

প্রভাষক, পপুলার মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে