আমাদের দেশে এমন লাখ লাখ রোগী আছেন যারা বিগত সময়ে হার্ট ব্লকের জন্য রিং পরেছেন অথবা বাইপাস অপারেশন (ওপেন হার্ট সার্জারি) করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ আবার এসব অপারেটিভ চিকিৎসা একাধিকবার নিয়েছে, কেউ রিং পরার পর আবারও ব্লক দেখা দেওয়ায় দ্বিতীয় বার রিং পরেছেন অথবা বাইপাস অপারেশন করেছেন। কেউ কেউ আবার তিন চার বারে এসব অপারেটিভ চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। এখন প্রশ্ন হলো কেন এসব হচ্ছে, একই বয়সের অন্য অনেক ব্যক্তিগণ কখনো হার্ট ব্লক সমস্যায় ভুগছে না। এখানে বলে রাখা ভালো যে, প্রবণতা বলে একটি কথা আছে। সমাজে মানুষের মধ্যে অনেক ধরনের প্রবণতা দেখা যায়, কারও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার প্রবণতা, শ্বাসকষ্ট হওয়ার প্রবণতা, কারও সহজে ঠান্ডা লাগার প্রবণতা ইত্যাদি যাদের একবার ব্লক হয়েছে সেটা যদি অল্প বয়সে হয়ে থাকে তবে তাকে বার বার ব্লকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়, তার মানে সে হার্ট ব্লকের প্রবণতায় ভুগছেন। যার ফলে বার বার হার্ট ব্লকে আক্রান্ত হচ্ছে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তবে কি এর থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই? না এর থেকে রেহাই পাওয়ার বেশ কিছু উপায়ও বিদ্যমান আছে।
অনেকে জেনে থাকবেন যে, হার্ট একটি মাংসের থলি এর মাঝখানে থাকা রক্তকে বাইরের অংশের মাংসপেশি চাপ প্রয়োগ করে থলে থেকে রক্ত বের করে দেয় আবার অন্য দিক থেকে রক্ত গ্রহণ করে আবার দ্বিতীয় চাপের মাধ্যমে রক্তকে একই দিকে প্রেরণ করে হার্ট পাম্পের কাজ সম্পন্ন করে। তাই হার্টকে একটি বায়োলজিক্যাল পাম্প বলা হয়ে থাকে। হার্টের মাংসপেশিকে রক্ত সরবরাহের মাধ্যমে অক্সিজেন ও রসদ (খাদ্য কণা) পৌঁছে দিতে বড় বড় তিনটি রক্তনালি রয়েছে, এদের শাখা প্রশাখা, উপ-শাখা ও আরও অনেক ছোট ছোট রক্তনালির মাধ্যমে এই বৃহৎ কর্মকান্ডটি (কর্মযজ্ঞ) সম্পন্ন করে থাকে। হার্টের রক্তনালিতে ব্লক থাকার ফলশ্রুতিতে হার্টের মাংসপেশি কোন অংশ খাদ্যাভাবে মারা যায় কোন কোন অংশ কাজ থেকে বিরত থেকে কোনমতে বেঁচে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে হার্টের পাম্পিং কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়ে থাকে এবং রোগী অনেক ধরনের জটিলতায় পতিত হয়। হার্ট ব্লক কি জন্য হয়? যদিও তার সব কারণ এখনো জানা সম্ভব হয় নাই। তবে যে সব কারণে হার্ট ব্লক হয় সেগুলো হচ্ছে, বয়স বৃদ্ধি, পুরুষ মানুষ, ধুমপান ও অন্যান্য নেশাজাতীয় বস্তু গ্রহণ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস, টেনশন, দুশ্চিন্তা, অলস (কায়িকশ্রম বিবর্জিত) জীবন-যাপন করা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা, ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করা, রক্তে উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টরল জাতীয় চর্বি বিদ্যমান থাকা। উপরে উল্লিখিত অবস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে হার্ট ব্লক হওয়া থেকে অনেকাংশেই মুক্ত থাকা সম্ভব।
মূলত মেডিসিন, খাদ্যাভ্যাস ও কায়িকশ্রম এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমেও এখন প্রতিরোধমূলক অনেক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসবের মাধ্যমে অনেক রোগীকে আবারও রিং বাইপাস না করেও সুস্থ্য জীবন-যাপনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়ে থাকে। এ ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকে সুস্থ জীবনযাপন করতে পারছেন। তবে যে সব রোগীরা এসব চিকিৎসায়ও সুস্থ হতে পারেন না তাদের ই.সি.পি থেরাপি দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে হার্টের মাংসপেশিতে অবস্থিত অকেজো রক্তনালিকে সচল করা হয়, চুপশানো রক্তনালি খুলে দেওয়ার ফলে রক্ত ব্লককে বাইপাস করে ভিন্ন পথে মাংসপেশিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন ও রসদ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। পূর্বে রিং ও বাইপাস করা রোগীদের জন্যও এই থেরাপি একটি উপযুক্ত ও কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই অবহেলা না করে এসব বিষয়ে আমাদের যত্নবান হতে হবে। মনে রাখতে হবে এসবক্ষেত্রে প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।
লেখক:
ডা. এম শমশের আলী
চিফ কনসালটেন্ট শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা ।