বর্তমানে ত্বকের যত্নে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কোরিয়ান পদ্ধতি এবং কোরিয়ান স্কিনকেয়ার সামগ্রী। কোরিয়ানদের মতো ঝকঝকে দাগহীন ত্বক কে না চায়? এজন্যই সবাই ঝুঁকছে কোরিয়ান পদ্ধতিতে ত্বকের যত্নের দিকে। অনেকেই লাভবান হচ্ছেন কিন্তু আবার অনেকে কোনো উপকার পাচ্ছেন না। উপকার পেতে হলে ত্বকের ধরণ অনুযায়ী সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।
না হলে কোনো উপকার তো পাবেনই না, উল্টো হিতে বিপরীতও হতে পারে। এই পদ্ধতিতে কয়েক ধাপে নির্দিষ্ট কিছু সামগ্রী ব্যবহার করতে হয়। প্রতিদিন এসকল ধাপ অনুসরণ করে কিছুদিনের মাঝেই পেয়ে যাবেন স্বাস্থ্যজ্জ্বল ত্বক।
ডাবল ক্লিনজিং
সবার প্রথমেই আসবে ডাবল ক্লিনজিং এর কথা।
এই পদ্ধতিতে ত্বকে জমে থাকা মেকাপ বা সানস্ক্রিন তোলা হয় এবং ত্বকের সিবাম আর পল্যুটেন্ট পরিষ্কার করে যা শুধুমাত্র ফেসওয়াশ ব্যবহার করে পরিষ্কার করা সম্ভব না। ডাবল ক্লিনজিং এর জন্য রয়েছে দুই ধরনের ক্লিনজার, ক্লিনজিং ওয়েল এবং মাইসেলার ওয়াটার। ত্বকের ধরণ বুঝে আপনাকে বেছে নিতে হবে যেকোনো একটি। এরপর সেটি ব্যবহারের পর মুখ পানি দিয়ে ধুয়ে সাধারণ ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। এভাবেই দুই ধাপে মুখ পরিষ্কার করা হয় বলে একে ডাবল ক্লিনজিং বলা হয়।
এক্সফোলিয়েটিং (মরা কোষ তোলা)
এই পদ্ধতিতে মুখে জমে থাকা শাল দূর করা হয়। তার জন্য দুই ধরনের এক্সফোলিয়েটর আছে, ফিজিক্যাল এবং ক্যামিকেল। ফিজিকাল এক্সফোলিয়েটর হলো শাল দূর করার প্রাচীন পদ্ধতি যা স্ক্রাবিং নামেও পরিচিত। তবে বর্তমানে ক্যামিকেল এক্সফোলিয়েটরও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এটি মূলত একটি তরল পদার্থ যা কটন প্যাডের সাহায্যে মুখে ব্যবহার করতে হয়। এতে স্ক্রাবিং এর মতো ত্বকে কঠোর থাকেনা বরং কোমলভাবেই পরিষ্কার করে। কোরিয়ান স্কিনকেয়ার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই ক্যামিকেল এক্সফোলিয়েটর সবার মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এক্সফোলিয়েটিং সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিনের বেশি করা উচিৎ না, এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
টোনিং
টোনিং হলো স্কিনকেয়ারের এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ যা অনেকেই ভুলে যায়। টোনার ব্যবহার করতে হয় ডাবল ক্লিনজিং এর পরপরই। ডাবল ক্লিনজিং এর পর মুখ অনেকটা শুষ্ক হয়ে যায় এবং পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক থাকে না। পিএইচ ব্যালেন্স ফেরাতেই মূলত টোনার ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ত্বকের রুক্ষতা দূর হয় এটি ব্যবহার করলে।
এসেন্স
কোরিয়ান স্কিনকেয়ারের মূল লক্ষ্যই হলো ত্বক আর্দ্র রাখা। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এজন্য টোনারের পর এসেন্স ব্যবহার করা হয়। এটি একটি তরল পদার্থ যা ত্বককে ভেতর থেকে ঠিক করে এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল করে তোলে। ত্বককে কোমল করতেও সাহায্য করে।
সিরাম
সিরাম হলো ত্বকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর মাঝে অন্যতম। ত্বকের দাগ দূর করা থেকে শুরু করে অ্যান্টি এজিং পর্যন্ত সব কাজেই এটি সাহায্য করে। এসেন্সের পর সিরাম ব্যবহার করলে এটি ত্বকে ভালো কাজ করে। ত্বকের সমস্যা বিবেচনা করে যেকোনো এক সিরাম বেছে ব্যবহার শুরু করুন। কিছুদিনের মাঝেই ফলাফল দেখতে পাবেন।
শিট মাস্ক
ত্বকের আর্দ্রতার জন্য কোরিয়ানদের মাঝে এই শিট মাস্কও বেশ জনপ্রিয়। শিট মাস্ক ব্যবহারে চটজলদি আর্দ্রতা পাওয়া যায়। সম্ভব হলে সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন ব্যবহার করুন এই শিট মাস্ক।
ময়েশ্চরাইজার ও আই ক্রিম
ত্বককে কোমল ও মসৃণ করতে ময়েশ্চরাইজারের কোনো বিকল্প নেই। এটি স্কিনকেয়ারের বাকি ধাপগুলোর কার্যকরিতাও বাড়িয়ে তোলে। যাকে আমরা বলতে পারি বাকি ধাপগুলো সিল করে দেয়। কোরিয়ানদের কয়েক রকম ময়েশ্চরাইজার রয়েছে, যেমন ওভার নাইট মাস্ক, সুদিং জেল, ক্রিম, ওয়াটার জেল ইত্যাদি। ত্বকের ধরন বুঝে বেছে নিন যেকোনো একটি। এরপর ব্যবহার করতে পারেন আই ক্রিম। আই ক্রিমের কাজ হলো চোখের নিচের কালি দূর করে আই ব্যাগ উজ্জ্বল রাখা।
সানস্ক্রিন
স্কিনকেয়ারের সর্বশেষ ধাপ হলো সানস্ক্রিন ব্যবহার। এতোগুলো ধাপ অনুসরণ করে সেগুলো যেন রোদের অতি বেগুনি রশ্মির জন্য বিফলে না যায় সেজন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরী। সানস্ক্রিন ত্বককে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে যার ফলে ত্বক রোদে পুড়ে যায় না। দিনের বেলা স্কিনকেয়ারের সকল ধাপ অনুসরণের পর সানস্ক্রিন অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করলে বাহিরে গেলে দুই-তিন ঘণ্টা পরপর রিঅ্যাপ্লাইও করতে হবে। তাহলেই ত্বক রোদ থেকে বাঁচবে ও সুস্থ থাকবে।
সূত্র : ফিল ইউনিক এবং হিন্দুস্তান টাইমস