গ্রীষ্মকালে শরীর সুস্থ রাখার জন্য পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যের দিকে মনোনিবেশ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, একজন ব্যক্তির খাদ্য গ্রহণ আবহাওয়া দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। আবহাওয়া উষ্ণ হলে মানুষ প্রায়শই কম খায়। যদিও এটি কিছু অবাঞ্ছিত ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে, শরীর তাপের সংস্পর্শে এলে কিছু শক্তি ব্যয় হয়, যার ক্ষতিপূরণের জন্য স্বাস্থ্যকরভাবে খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
অন্যদিকে, শীতকালে মানুষের খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো সূর্যের প্রভাব এবং এটি ক্ষুধাকে প্রভাবিত করতে পারে। শীতকালে যখন আমাদের শরীর কম তাপের সংস্পর্শে আসে, তখন আমরা শক্তি সঞ্চয় করা এবং বেঁচে থাকা নিশ্চিত করার জন্য বেশি খাবার খেয়ে থাকি। অপর পক্ষে গ্রীষ্মকালে, যখন তাপ বেশি থাকে, তখন খাবার গ্রহণের ইচ্ছা কমে যায়।
গ্রীষ্মের ঋতুতে পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এখানে কিছু টিপস রয়েছে :
১. আপনার খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন
একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট অনুসরণ করার অর্থ এই নয় যে আপনি প্লেট থেকে পছন্দের খাবারগুলো সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে ফেলবেন। একটি ভালো বিকল্প হিসেবে পছন্দের খাবারটি অল্প পরিমাণে গ্রহণ করুন, অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করবেন না। এ অভ্যাসটি আপনার শরীরকে কম খাবারে সন্তুষ্ট রাখবে।
২. একটি স্বাস্থ্যকর প্লেট পদ্ধতি মেনে চলুন
স্বাস্থ্যকর প্লেট পদ্ধতি যেখানে পর্যাপ্ত প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি এবং ফল ও শাকসবজির ভারসাম্য বজায় থাকবে। একটি আদর্শ প্লেটের ৫০ শতাংশ ফল এবং সবজি থাকা উচিত এবং বাকি অর্ধেকে থাকবে দুগ্ধজাত খাবার, প্রোটিন এবং শর্করা।
৩. ক্যাফেইন গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করুন
ক্যাফেইনের বেশি গ্রহণ ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ক্যাফেইনের মূত্রবর্ধক প্রভাব রয়েছে, যা ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হতে পারে। ডিহাইড্রেশন মাথাব্যথার কারণও হতে পারে তাই দিনে এক বা দুই কাপের বেশি চা পান করা অনুচিত।
৪. সঠিক তাপমাত্রার স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন
যখন তাপমাত্রা বেশি থাকে, তখন চিনিযুক্ত পানীয় এবং খাবার গ্রহণের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। যদিও এই চিনিযুক্ত খাবারগুলো পুনরায় শক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু এই অধিক চিনিযুক্ত খাবারগুলোর পুষ্টিমান বেশি নয়। এ সময়ে বেশি বেশি পানি পান করা বা প্রাকৃতিক শর্করা আছে এমন তাজা ফলের রস পান করা ভালো। গরমে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর উপায়ে বিভিন্ন ফলের স্মুদি তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে।
৫. ট্রেন্ডি ডায়েট এড়িয়ে চলুন
যে কোনো ডায়েট মেনে চলার আগে এর প্রভাব সম্পর্কে জানা জরুরি। ডায়েটের সম্ভাব্য সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো জেনে নিন। যদি সম্ভব হয়, শরীরে এর প্রভাব এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানার জন্য একজন ডায়েটিশিয়ান বা পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
৬. নিয়মিত খাবার গ্রহণ করুন
খাবার এড়িয়ে যাওয়া, বিরতিহীন উপবাস করা এবং ক্যালোরি কমানো বিভিন্ন মানুষের উপর ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলে। আপনার জীবনধারা এবং আপনার শরীরের যা প্রয়োজন তার উপর নির্ভর করে সঠিকভাবে খাবার গ্রহণ করুন। উদাহরণস্বরূপ, পরিশ্রমী ব্যক্তিদের এমন একটি ডায়েট বিবেচনা করা উচিত যাতে উচ্চ শ্রেণির প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে যা পেশি তৈরি করতে এবং ওয়ার্কআউটের সময় শক্তি অর্জন করতে সহায়তা করে। কম পরিশ্রমী ব্যক্তিরা তাদের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট গ্রহণের উপর বেশি মনোযোগ দিতে পারে। একটি স্বাস্থ্যকর খাবার পরিকল্পনার মধ্যে কুকিজ, পেস্ট্রি এবং কেকজাতীয় খাবারকে ফল, বাদাম এবং কম চর্বিযুক্ত দইয়ের মতো স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলোর সঙ্গে প্রতিস্থাপন করুন।
৭. বেশি বেশি তরল খাবার গ্রহণ করুন
গরমে শরীরে বেশি ঘাম হতে পারে তাই শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে বেশি তরলজাতীয় খাবার প্রয়োজন যা শরীরকে অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে বাঁচাতে, শক্তি জোগাতে এবং সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করতে পারে। দিনের শুরু এক গ্লাস পানি দিয়ে করা উচিত, সেইসঙ্গে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে যা শরীরকে হাইড্রেটেড করতে সাহায্য করবে। এনার্জি ড্রিংকসের পরিবর্তে ফলের জুস বা ডিটক্স পানি পান করার চেষ্টা করুন।
লেখক:
মাহফুজা আফরোজ সাথী
প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হসপিটাল, চট্টগ্রাম।