আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদকে বলা হয় ত্যাগের ঈদ। ভোগ নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ; আমরা বলি, কিন্তু এটার মর্ম বুঝি না। সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ত্যাগ করতে পারাই এই উৎসবের মূল কথা। কোরবানি ঈদ মানে নিজেদের উদরপূর্তি নয়, বরং আশপাশের অভাবী মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করাই আসল উদ্দেশ্য হওয়া দরকার।
কোরবানি ঈদে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে। ঈদের দিন রাতে বা পরের দিন প্রচুর মানুষ উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট আ্যটাকের শিকার হয়ে থাকেন। কারণ কোরবানির মাংস খেলে কিছু হবে না বা একদিন খেলে কিছু হবে না ভেবে অনেকে প্রচুর খেয়ে থাকেন। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই হার্টের রোগীদের এটা মাথায় রেখে খাদ্য পরিকল্পনা করতে হবে। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির মাংস উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত হওয়ায় হার্টের রোগীদের তা এড়িয়ে চলা উচিত। এসব মাংস স্ট্রোক পর্যন্ত ঘটতে পারে।
হার্টের রোগীরা প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন রকম ডাল বা ডালের তৈরি খাবার, সয়া দিয়ে তৈরি খাবার, মাশরুম দিয়ে তৈরি খাবার খেতে পারেন। ঈদের দিনের মেন্যুতে রাখতে পারেন তেল ছাড়া সবজি পোলাও বা ফ্রায়েড রাইস বা মাশরুম পোলাও। যা সহজেই তৈরি করা যায়।
প্রণালি : একটি পাত্রে পিঁয়াজ, রসুন আর মাশরুম অল্প কুসুম গরম পানিতে ভেজে নিতে হবে। ভাজা হলে পোলাও চাল, লবন, গোলমরিচ, শুকনা মরিচ, পানি মিশিয়ে মৃদু আঁচে পানি শুকানো পর্যন্ত ভেজে নিন। এবার এতে ধনেপাতা আর পিঁয়াজকলি মিশিয়ে পরিবেশন করুন।
এ ছাড়া ছোলা পোলাও বা সয়াবিন/ সয়াবড়ি/ সয়াসবজি পোলাও রান্না করতে পারেন। সঙ্গে চায়নিজ সবজি রাখুন। কর্ন ফ্লাওয়ার না দিয়ে চালের গুঁড়া ব্যবহার করুন ঘনত্ব বাড়াতে। সয়ামিট/ সয়াবিন/ সয়াসবজি অনেকেই অনেক নামে চেনেন। সয়াভুনা হতে পারে মাংসের বিকল্প দারুণ রেসিপি। প্রণালি : সয়ামিট গরম পানিতে ফুটিয়ে নিন। ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে চেপে চেপে তুলুন। এবার মাংসের মসলা, গরম মসলা, জিরা, ধনে, পিঁয়াজবাটা, রসুনবাটা, টমেটো পেস্ট দিয়ে তাতে কুসুম গরম পানি দিয়ে ভেজে নিতে হবে। মসলা কষানো হলে তাতে সয়ামিট ছেড়ে দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ভেজে নিতে হবে। এর সঙ্গে ফুলকপি, ব্রকোলি ইত্যাদি সবজি যোগ করা যেতে পারে। সয়াভুনা তৈরি হলে গরম পোলাওয়ের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন। এটা খেতে গরুর মাংসের চেয়ে সুস্বাদু অথবা চিংড়িকারির মতো স্বাদের।
সয়া দিয়ে কাবাব বানাতে পারেন সহজেই। সয়া সিদ্ধ করে নিন। একটু ব্লেন্ড করে নিন কিমার মতো নরম হবে। এরপর এতে কাবাবের সব মসলাযুক্ত করুন। কাবাবের শেপ করে ফ্রাইপ্যানে হালকা তাপে ঢেকে দিন। তেল ছাড়া এই কাবাব পোলাওয়ের সঙ্গে দারুণ খেতে।
এ ছাড়া ডেজার্ট রাখতে পারেন কিছু। যেমন, সাবুদানা পায়েস, গাজরের পায়েস। এতে চিনির পরিবর্তে খেজুর বা যেকোনো মিষ্টি ফলের ব্যবহার করতে পারেন।
প্রণালি : সয়াদুধে বা স্কিম মিল্কে গাজর কুচি করে কেটে ১৫-২০ মিনিট মৃদু আঁচে ফুটিয়ে নিতে হবে। এবার এতে খেজুর কুচি দিয়ে নাড়তে থাকুন। তারপর এলাচ গুঁড়া করে দিন। হয়ে গেলে কিশমিশ দিয়ে পরিবেশন করুন। এখন যেহেতু ফলের মৌসুম চলছে। ফলের সালাদ করে খেতে পারেন। আম দিয়ে তৈরি করতে পারেন সবুদানার পায়েস।
প্রণালি : সাবুদানা সয়াদুধে বা গরম পানিতে ফুটিয়ে নিন। নরম মুক্তার দানার মতো হবে। এতে আম কুচি করে কেটে মিশিয়ে নিন। এতে খেজুর, কলা, আপেল ইত্যাদিও মেশানো যায়। এলাচি গুঁড়া অল্প মিশিয়ে দিন। ফলের মিষ্টি দিয়ে সাবুর পায়েস খেতে খুবই সুস্বাদু।
এছাড়া হার্টের রোগীরা প্রচুর সবজি ও সালাদ রাখুন ও প্রচুর পানি পান করুন। এখন অনেক গরমের সময় তাই কিছু পানীয় রাখতে পারেন। এবিসি জুস যা উচ্চ এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং হার্টের রোগীদের জন্য খুবই ভালো। একটা আপেল মাঝারি সাইজের, বিট অর্ধেক, গাজর অর্ধেক নিয়ে সামান্য আদা ও লেবুর রসে যোগ করে ব্লেন্ড করে নিন। এই এবিসি জুস গরমের থেকে দেবে মুক্তি আর সঙ্গে হার্টের জন্যও খুব উপকারী।
যেসব হার্টের রোগীদের ডায়াবেটিস আছে তারা যে কোনো মিষ্টি ফল মধ্য-সকালে খাবেন। আম, কাঁঠাল, কলা, খেজুর একসঙ্গে সব মিষ্টি ফল গ্রহণ করবেন না। এসব ফল ওজন বাড়ায়। যাদের ওজন বেশি তারা কম খাবেন। যারা ওজন বাড়াতে চান তারা বেশি খেতে পারেন।
কোরবানির ঈদ সবার আনন্দে কাটুক। সবাই নিজেদের প্রতি যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন। প্রয়োজনে ডাক্তার ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
লেখক:
সারাবান তহুরা তরু
সিনিয়র পুষ্টিবিদ, সাওল হার্ট সেন্টার বিডি লি.