কাশির সঙ্গে রক্ত গেলে কি করবেন?

0
110
Spread the love

অনেকেই মনে করেন এটা হয়তো খুব সাধারণ কোনো সমস্যা। কিন্তু যখন জটিলতা বাড়ে তখন ঠিকই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন

ফোঁটা ফোঁটা রক্ত বা কফমিশ্রিত রক্ত, শুধুু রক্ত, পরিমাণ কম বা বেশি যা থাক না কেন, তাকে মেডিকেলের ভাষায় হেমোপটাইসিস বলে। কাশির সঙ্গে রক্ত গেলে তার সঠিক ইতিহাস জানা এবং কারণ বের করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে কখনোই অবহেলা করা ঠিক নয়।

প্রথম দিকে অনেকেই আমরা বিষয়টাকে গুরুত্ব দেই না। অনেকেই মনে করেন এটা হয়তো খুব সাধারণ কোনো সমস্যা। কিন্তু যখন জটিলতা বাড়ে তখন ঠিকই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কারণ কাশির সঙ্গে রক্ত দেখা দিলে কখনো কখনো ফুসফুসের জটিল রোগ সন্দেহ করা হয়। যেমন ফুসফুসে ক্যান্সার। দ্রুত রোগ নির্ণয় করে সঠিক মাত্রায় ওষুধ সেবন করে বেশির ভাগ রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল/ভালো করা সম্ভব। যেমন যক্ষ্মা প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ছয় মাস ওষুধ খেলে যক্ষ্মা ভালো হয়। যেসব কারণে কাশির সঙ্গে রক্ত যায়- ব্রঙ্কাইটিস (শ্বাসনালির প্রদাহ), ফুসফুসে ক্যান্সার যক্ষ্মা, ব্রঙ্কিয়েক্টেসিস (স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্বাসনালি), ফুসফুসে ফোঁড়া হার্টের ভাল্বের সমস্যা যেমন- মাইট্রাল স্টেনোসিস, হার্ট ফেইলার। এ ছাড়া অন্যান্য কারণ, যেমন বুকের আঘাতজনিত কারণে বিভিন্ন ধরনের ভাসকুলাইটিস যেমন পালমোনারি ধমনি-শিরা প্রদাহজনিত জটিলতা বিভিন্ন প্রকার রক্তের রোগ যেমন ব্লাড ক্যান্সার।

এছাড়া অনেক সময় ওষুধজনিত কারণে ওয়ারফেরিন, ব্যথানাশক ওষুধ ইত্যাদি। কিছু বিরল কারণে যেমন মহিলাদের প্রতিমাসে ঋতু স্রাবের সময় কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে ক্যাটামেনিয়াল হেমোপটাইসিস। প্রথমে কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া সন্দেহ করলেও অনেক সময় কাশির সঙ্গে কিংবা নাকের ক্ষতজনিত কারণে রক্ত যেতে পারে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীর কাছ থেকে ইতিহাস জানা প্রয়োজন। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজন কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা।

উৎস : কোন জায়গা থেকে রক্ত বের হচ্ছে তার ইতিহাস থেকে রোগ নির্ণয় করা যায়। যেমন নাক দিয়ে রক্ত আসা, গলা ফ্যাসফ্যাসে হয়ে যাওয়া, মুখে ঘা থাকলে শ্বাসনালির ওপরিভাগ ইনফেকশন সন্দেহ করা হয়। কালচে লাল রং, নোনতা লাগা, বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, আগে জন্ডিস ও মদ পানের ইতিহাস থাকলে বমির সঙ্গে রক্ত এসেছে বলে ধারণা করা হয়। যার উৎস খাদ্যনালি বা লিভারজনিত জটিলতার কারণে। তাই এন্ডোসকপি জাতীয় পরীক্ষা প্রয়োজন। কাশির সঙ্গে রক্তের রং দিয়ে বিভিন্ন অসুখ আলাদা করা যায়। যেমন ফেনাযুক্ত কাশি, পরিষ্কার লাল রং শ্বাসনালিজনিত বা লিভারজনিত কারণে। কাশির সঙ্গে রক্তের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করেও রোগ আলাদা করা যায়। যেমন বেশি পরিমাণে রক্ত গেলে ফুসফুসে ক্যান্সার, যক্ষ্মা, ফুসফুসে ফোঁড়া, স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্বাসনালি। কাশির সঙ্গে অল্প পরিমাণ রক্ত গেলে ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, হৃদরোগের জটিলতা সন্দেহ করা হয়। হঠাৎ করে কারও কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া শুরু হলে হৃদরোগজনিত জটিলতার কারণে হতে পারে।

এছাড়া ক্রমাগত কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, মাঝে মাঝে রক্ত যাওয়া ফুসফুসে ক্যান্সার সন্দেহ করা হয়। অনেকেই এ রকম কাশিকে গুরুত্ব দেয় না।  কেউ কেউ আবার এড়িয়ে যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ঠিক নয়। অথচ এই প্রাথমিক অবস্থা থেকে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। যেহেতু অবহেলা করা হয়, ফলে এক পর্যায়ে জটিলতা বাড়তে থাকে। কাশি হলে কেউ কেউ আবার নিজে নিজেই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে থাকেন। যা ঠিক নয়। তাই  প্রাথমিক অবস্থা থেকেই রোগের চিকিৎসা নিতে হবে।  প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

লেখক :

অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোস্তফা হোসেন

বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ

মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে