আসছে শীত বাড়ছে করোনার শঙ্কা

0
890
শীত
Spread the love

ছবিঃ ইন্টারনেট

রোগী বাড়ার আশঙ্কা, সাধারণ ফ্লু আর করোনাভাইরাস আলাদা করা সমস্যা

শীতকালে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বাড়ছে উৎকণ্ঠা। ঠান্ডাজনিত রোগ বৃদ্ধি, গণপরিবহনে দরজা-জানালা বন্ধ থাকা, সামাজিক অনুষ্ঠান বেশি হওয়ায় সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়েও চলছে জোরেশোরে আলোচনা। কার্যকর কোনো টিকা না আসা পর্যন্ত করোনাভাইরাস মহামারীকে বাগে আনা মুশকিল বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

আসন্ন শীতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা মহামারী আবার দেখা দিলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সরকারি অর্থ খরচ করার বিষয়ে সর্বোচ্চ মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইউরোপের অনেক দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসছে। এটা থেকে আমাদের নিরাপদে থাকতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শীতে তাপমাত্রা ও কম আর্দ্রতা করোনাভাইরাসকে আরও বেশি সময়ের জন্য বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেবে। সেই সঙ্গে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে করোনাভাইরাসটি মানুষের ওপর আরও বেশি প্রভাব ফেলবে। শীতকালে নিউমোনিয়া, হাঁপানি ও অন্যান্য সর্দিজনিত রোগের কারণে করোনায় মৃত্যুর হারও বাড়তে পারে।’

যুক্তরাজ্য, ভারত, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিচালিত সাম্প্রতিক কিছু গবেষণার দাবি, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা কমিয়ে দিয়ে শীতকালে এ ভাইরাসটির প্রভাব আরও বাড়তে পারে। যুক্তরাজ্যের মেডিকেল সায়েন্সেস একাডেমির এক সমীক্ষায় সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শীতকালে নতুন করে সংক্রমণের কারণে কভিড-১৯ সম্পর্কিত হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ধারণা করছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলেছে, আর্দ্রতার এক শতাংশ কমলে কভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা ৬ শতাংশ হারে বাড়িয়ে দিতে পারে। তারা আরও বলছে, কেবলমাত্র আর্দ্রতা কমে যাওয়াই কভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ানোর সঙ্গে জড়িত। এর সঙ্গে তাপমাত্রার কোনো সম্পর্ক নেই। ভারতের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় আইআইটি-ভুবনেশ্বর এবং এআইআইএমসের গবেষকদের একটি দল সম্প্রতি ওই দেশের নীতিনির্ধারকদের দেশটিতে বর্ষা ও শীতের সময় কভিড-১৯ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনটি গবেষণাকে ভিত্তি করে তারা বলেন, মৌসুমি বৃষ্টিপাত, ঠান্ডা বায়ুমন্ডল এবং শীতকাল ঘনিয়ে আসাসহ পরিবেশগতভাবেই ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে পারে।

ভারতের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) এক সমীক্ষা অনুসারে, দেশটিতে আগামী শীতকালের শেষে প্রতিদিন প্রায় ২ দশমিক ৮৭ লাখ মানুষ কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হতে পারে। দেশটির বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ও সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব রাজস্থানের গবেষকরাও তাদের গবেষণায় শীত মৌসুমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর পরিমাণ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, শীতে সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। কয়েকটি কারণে শীতে সংক্রমণ বাড়তে পারে। আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় খুব দ্রুত ড্রপলেট শুকিয়ে যাবে। মাস্ক না পরলে কাশি, সর্দির সঙ্গে আসা জীবাণু বাতাসে বেশি সময় ভাসমান থাকবে। এ ছাড়া শীতে ধুলা বেড়ে যায়। ধুলাও জীবাণুর বাহক হিসেবে কাজ করে। ঘর, বাসের দরজা-জানালা বন্ধ থাকলে জীবাণু ভেসে বেড়াবে, মাটিতে পড়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে না। ঘরের ভিতরে বেশি মানুষ থাকলে আরও বেশি জমবে, ভাইরাসের সংক্রমণ হার বেড়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, সর্দি, কাশি, ঠান্ডা লাগলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। যা শীতে সংক্রমণ বাড়ার একটি কারণ।

এ ছাড়া বিয়ে, পিকনিকসহ সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে যায়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে কমিয়ে ফেলিনি। পদক্ষেপ যেগুলো নিয়েছি কোনোটাই সম্পূর্ণ হয়নি। কয়েক মাস জোরালো পদক্ষেপ, জনগণকে সচেতন করা হয়নি। বদ্ধঘরে যাতে বেশি মানুষ সমবেত না হয় এ ব্যাপারে প্রশাসনিক নির্দেশনা প্রয়োজন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যতদিন আক্রান্ত ব্যক্তি থাকবে ততদিন করোনা সংক্রমণ থাকবে। গ্রীষ্মের তাপে যদি করোনার জীবাণু ক্ষতিগ্রস্তই হতো, তাহলে ইকুয়েডর, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় করোনায় লাশের সারি থাকত না। শীতপ্রধান দেশে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে দরজা-জানালা লাগিয়ে মানুষ গাদাগাদি করে থাকে।

এ জন্য সংক্রমণ বাড়ে। আকাশপথে যোগাযোগ বাড়ায় রোগী এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়বে। আমাদের দেশে শীতে সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে যাওয়ায় সংক্রমণ বাড়তে পারে। সামাজিক মেলামেশা না কমলে ঋতু নয় হুট করেই যে কোনো সময় সংক্রমণ বাড়তে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে