জীবন্ত প্রাণীর কোষে ডিএনএ বা ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড থাকে। এ জিনোমিক উপাদান কোষ বৃদ্ধি, বিকাশ, গঠন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং রোগ-বালাইসহ প্রয়োজনীয় তথ্য ধারণ ও নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
এ জিনোমিক উপাদান প্রায় ৩.২ বিলিয়ন ডিএনয়ের সন্নিবেশে গঠিত। রাসায়নিক উপাদান অ্যাডেনিন গুয়ানিন, সাইটসিন, থায়ামিন-এর সমন্বয়ে একটি নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে সাজানো থাকে, যা জীবন্ত প্রাণীর জেনেটিক কোড নির্ধারণ করে।
ক্যানসার সৃষ্টিকারী টিউমারের শনাক্তকরণ এবং পরীক্ষায় ডিএনএ মিউটেশন বা পরিবর্তনের ব্যতিক্রমী প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যায়। গবেষকরা, হাজার হাজার বিভিন্ন টিউমার এবং লাখ লাখ মিউটেশন অধ্যয়ন করে এক ধরনের নির্দিষ্ট প্যাটার্ন আবিষ্কার করেছেন, যা সংক্ষেপে ‘মিউটেশনাল সিগনেচার’ হিসাবে পরিচিত। এ ‘মিউটেশনাল সিগনেচার’ দেহের ক্যানসার বিকাশের সময় নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া দ্বারা তৈরি হয় তার অন্যতম কারণ হচ্ছে ডিএনএ রেপ্লিকেশন প্রক্রিয়ার ত্রুটি।
ডিএনএ রেপ্লিকেশন একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যা সব জীবন্ত প্রাণীর জৈবিক উত্তরাধিকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাব কাজ করে। এ প্রক্রিয়ায় একটি মূল ডিএনএ অণু থেকে দুটি অভিন্ন ডিএনএ প্রতিনিয়ত তৈরি হতে থাকে। যদিও ডিএনএ রেপ্লিকেশন একটি অত্যন্ত সঠিক প্রক্রিয়া, মাঝে মাঝে এ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ঘটতে পারে ফলে ডিএনএ তার আদি বৈশিষ্ট্যর পরিবর্তে ভুল বা নতুন বৈশিষ্ট্যর ডিএনএ তৈরি করে। ফলে ক্ষতিকারক প্রোটিন তৈরি হয় এবং সঠিক কার্যকারিতা ব্যাহত হওয়াসহ শরীরে অন্য পরিবর্তন ঘটাতে পারে এবং সম্ভাব্যভাবে ক্যানসারের মতো রোগের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
ডিএনএ রেপ্লিকেশন পদ্ধতির ত্রুটির বহু কারণ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ক্যানসারাস এজেন্টের সংস্পর্শ যেমন-সিগারেট, বিষাক্ত গ্যাস, আলট্রা ভায়োলেট রেডিয়েশন, ক্ষতিকারক ভাইরাস ইত্যাদিকে কারণ হিসাবে ধরা হয়। ক্যানসার আক্রান্ত একেক ব্যক্তির এ ‘মিউটেশনাল সিগনেচার’ একেক রকম হয়ে থাকে। মিউটেশনাল সিগনেচারের এ গোপন রহস্য ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তির নিজস্ব জিনোমিক উপাদান স্ট্যাডির মাধ্যমে অনেকটাই শনাক্ত করা সম্ভব।
সঠিক ক্যানসার ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে এ পিনপয়েন্ট ‘মিউটেশনাল সিগনেচার’ শনাক্তকরণ এবং সেই অনুযায়ী সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা নির্ধারণ বর্তমান সময়ের একটা অভিনব পদ্ধতি যা পার্সোন্যালাইজড বা প্রিসিশন অনকোলজি হিসাবে ইতোমধ্যে অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত।
এ পদ্ধতিতে একজন ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তির ওষুধের কার্যকারিতা উন্নত করা এবং অনুপযুক্ত ওষুধের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত অসুস্থতা, মৃত্যুহার এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর ঝুঁকি এড়াতেও সক্ষম। ফলে, একজন চিকিৎসকের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সঠিক ওষুধ প্রয়োগ সম্ভব হতে পারে।
উন্নয়নশীল দেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশেও এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে দেশের জনস্বাস্থ্য, চিকিৎসা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও চিকিৎসাসেবীর অর্থনৈতিক খরচের বোঝা কমানোসহ ইতিবাচক প্রভাবও ভূমিকা রাখতে পারে ।