অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে যাওয়া!

0
284
Spread the love

মানুষ যখন দুর্র্বল হয়ে পড়ে, সেটা যে কারণেই হোক। তখন অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠার সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে মানুষ কেন দুর্বল হয়ে পড়ে? বয়স্ক ব্যক্তিগণ দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়েন এটাই প্রকৃতির নিয়ম। একই বয়সের ব্যক্তিরা যে একই মাত্রায় দুর্বল হবেন তা বলা যায় না, তবে ব্যক্তিভেদে দুর্বলতার তারতম্যে পরিলক্ষিত হয়। তাই দুর্বলতার সঙ্গে বয়সের সরাসরি যোগাযোগ ঘটে না।

মানব শরীরের যে কোনো সিস্টেম বা অঙ্গ অসুস্থ হয়ে পড়লে, শারীরিক দুর্বলতা আসবে এটাই স্বাভাবিক। অসুস্থতার প্রাথমিক পর্যায়ে শরীর অন্যান্য অঙ্গের সহায়তায় দুর্বলতা প্রতিরোধ করতে পারে, তবে এটা সাময়িক সময়ের জন্য, দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় মানুষ দুর্বল হয়ে পড়বে এটাই সচরাচর পরিলক্ষিত হয়। মানবদেহে হার্ট এবং ফুসফুসের অসুস্থতা দুর্বলতার মূল কারণ হিসেবে বিবেচ্য। ফুসফুসের অসুস্থতার রোগীগণ দীর্ঘমেয়াদি কাশিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। এটা অনেক সময় শীত বা গরমে মানে আবহাওয়াজনিত কারণে রোগের তীব্রতা অনেক সময় কমবেশি হয়ে থাকে। তবে হার্টের অসুস্থতায় প্রায় সময়ই আগ থেকে কোনোরূপ দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা পরিলক্ষিত হয় না।

প্রাথমিক পর্যায়ে অত্যধিক পরিশ্রমে এ ধরনের দুর্বলতা দেখা দেয়, কেউ বুঝতে পারেন, আবার কেউ বুঝতে পারেন না। তবে যারা কায়িকশ্রমে নিয়োজিত তারা খুব তাড়াতাড়িই বুঝতে পারেন। আর যারা খুবই নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কাজ করেন, তারা প্রাথমিক উপসর্গ বুঝতে বা অনুভব করতে পারেন না। এ ধরনের ব্যক্তি পরিবেশগত কারণে যেমন সামাজিকতা অথবা বাধ্যবাধকতা ছাড়া খুব একটা কায়িকশ্রম করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি কাশি, ফুসফুসের লক্ষণ বলে বিবেচিত। কিন্তু তেমন কোনো একক লক্ষণ হার্টের অসুস্থতায় দেখা যায় না, তবে ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়।

হার্টের লক্ষণগুলো হলো-

পরিশ্রমকালীন বুকে চাপ, বুক ভার, বুক পিঠে চাপ দিয়ে ধরা, বুক ব্যথা তার সঙ্গে গলা, হাত বা পেটের উপরি ভাগে বুক ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে, শ্বাস-প্রস্বাশ ঘন হয়ে যাওয়া এবং হার্টের গতি বৃদ্ধি পাওয়া, যাকে বুক ধড়ফড় (প্যালপিটিশন) বলে আখ্যায়িত করা হয়। হার্টের অসুস্থতায় লক্ষণগুলো যেহেতু সব সময় বিদ্যমান থাকে না। পরিশ্রমে পরিলক্ষিত হয় আবার বিশ্রাম নিলে খুব তাড়াতাড়ি তা দূরীভূত হয়। কেউ এটাকে গ্যাসের সমস্যা, কেউ হাঁপানির সমস্যা, কেউ এটাকে এলার্জিক সমস্যা আবার কেউ খাওয়া-দাওয়াজনিত অবস্থা, যেমন- মাংস, পোলাউ, বিরিয়ানি বা অন্য কোনো খাদ্যের কারণে হয় বলে মনে করেন। ফলশ্রুতিতে অনেক ধরনের খাদ্য বর্জন করে দিনাতিপাত করেন।

এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় মাংস, ডিম, দুধের মতো প্রোটিন জাতীয় খাদ্যই বেশি বর্জন করার মধ্যে। কারণ অনেকে এমনটা মনে করেন যে মাছ, মাংস, ডিম অথবা দুধ খেলেই হার্টের সমস্যা হয়, তাই এসব খাবার বন্ধ করে প্রাকৃতিকভাবে সুস্থ হওয়া যাবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, প্রোটিন বর্জনের ফলে মানুষের শারীরিক যোগ্যতা কমে যায়, মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। সব সময় শারীরিক যোগ্যতা বজায় রাখতে হবে, তা না হলে দুর্বল হয়ে জটিলতায় পড়তে পারেন। ফলে মানুষ আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের খাদ্য বর্জন উচিত নয়।

দুর্বলতার প্রধান দুটি কারণ যেমন-

হার্টের সমস্যা ও ফুসফুসের সমস্যা ছাড়াও অন্য কারণে মানুষ দুর্বল হতে পারে। যেমন-রক্তশূন্যতা, ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তি, থাইরয়েড হরমোন জনিত অসুস্থতা, লিভার ফেইলুর, ক্যানসার জাতীয় অসুস্থতা বা এর চিকিৎসা হিসেবে ক্যামোথেরাপি অথবা রেডিও থেরাপি গ্রহণ করা। এসব ব্যক্তি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন এবং সহজে হাঁপিয়ে ওঠেন। অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠলে এর কারণ খুঁজতে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়।

লেখক:

 ডা. এম শমশের আলী

চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে