করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে তিনি করোনা মোকাবেলার বিদ্যমান অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
ইতোপূর্বে আসন্ন শীতে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। উল্লেখ্য, সারা বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিয়ে আসছেন, শীতকালে করোনা সংক্রমণ আরও বাড়বে। করোনার সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউ প্রথম ঢেউয়ের চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। কোনো কোনো শীতপ্রধান দেশে ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দিয়েছে এবং সেসব দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারও বেড়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশে আসন্ন শীত সামনে রেখে করোনা মোকাবেলায় জোরালো প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদের। অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দেশে শীতের প্রকোপ বাড়তে পারে। আর এ সময়টিতেই দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে আশঙ্কা।
উদ্বেগের বিষয় হল, করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা খুবই কম। শুরুর দিকে মানুষ কিছুটা সতর্ক হলেও এখন মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি ব্যাপারে চরম উদাসীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে অনেকের মধ্যে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাস্ক পরায় অনীহা দেখা দেয়ায় মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে অ্যাকশনে যাচ্ছে সরকার। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে আকস্মিক অভিযান পরিচালিত হবে ওইসব স্থানে।
করোনা মোকাবেলায় মাস্ক পরা জরুরি বটে; সেই সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করাও দরকার বলে মনে করি আমরা। এ ব্যাপারে জনগণের যেমন সচেতনতা ও সতর্কতা প্রয়োজন, তেমনি সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে। বাস্তবতা হল, শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য এর আগে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা ক্রমান্বয়ে শিথিল করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, গণপরিবহনে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার পদক্ষেপ থেকে সরে এসেছে সরকার।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা গেছে। করোনার নমুনা পরীক্ষায় ফি আরোপ করার পর সাধারণ মানুষের পরীক্ষা করানোর হার কমে গেছে ব্যাপকভাবে। করোনার চিকিৎসাক্ষেত্রে এখনও রয়ে গেছে নানা সমস্যা।
এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা যথাযথ মেনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে। শিক্ষা নিতে হবে অতীতের ভুল-ভ্রান্তি থেকে।
সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় করোনা মোকাবেলায় আত্মতৃপ্তিমূলক বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক দেশ থেকে ভালো করছি। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারের দিক থেকে আমরা অনেক দেশ থেকে ভালো অবস্থায় আছি এ কথা যদিও সত্য; তবে বাস্তবতা হল, শুরুতে যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলে; বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলো দিয়ে মানুষের প্রবেশের পর তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা এবং দেশব্যাপী লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর করা হলে দেশে করোনার ব্যাপকতা অনেক কম হতো বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কাজেই মানুষের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগেই সংশ্লিষ্ট সবাইকে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
সূত্রঃ যুগান্তর