চলতি বছরের প্রথমার্ধে কোভ্যাক্স থেকে সোয়া এক কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা পেতে পারে বাংলাদেশ।
এই টিকা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকা বলেও জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নেতৃত্বাধীন এই প্ল্যাটফর্ম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস বা গ্যাভি এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের গড়া প্ল্যাটফর্ম হল কোভ্যাক্স; যা গঠিত হয়েছে বিশ্বের সব মানুষের সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক পাওয়া নিশ্চিত করতে।
বিভিন্ন দেশে টিকা বণ্টনের যে তালিকা কোভ্যাক্স বুধবার প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, জুনের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ ১ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার ডোজ কোভিড-১৯ টিকা পেতে যাচ্ছে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকার টিকা কিনে তা দিয়ে টিকাদান শুরু করলেও কোভ্যাক্স থেকে কোন টিকা পাওয়া যাবে, তা অনিশ্চিত ছিল।
তবে কোভ্যাক্সের প্রকাশিত তালিকায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাই পাচ্ছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যেসব টিকা ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে তুলনামূলকভাবে অক্সফোর্ডের টিকাই বাংলাদেশে সংরক্ষণ সহজ।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন এখনও দেয়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এখনও তাদের মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে এই টিকা।
কোভ্যাক্স বলেছে, এই সময়ের মধ্যে অন্য টিকা পাওয়া গেলে বিভিন্ন দেশের জন্য তালিকায় উল্লেখ করা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সংখ্যা বদলানো হতে পারে।
বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যেই ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার ১২ লাখ ডোজ পাওয়ার আশা করছে কোভ্যাক্স।
বাংলাদেশও ফাইজারের টিকা পেতে ইচ্ছুক বলে এই প্ল্যাটফর্মকে জানিয়েছিল। তবে প্রথম দফায় ফাইজার যে পরিমাণ টিকা দেবে, সেখান থেকে বাংলাদেশের পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
ফাইজারের টিকা কম সংখ্যায় পাওয়া যাবে বিধায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে পর্যালোচনায় এই টিকার জন্য মনোনীত দেশের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়।
এক্ষেত্রে টিকাটি মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে তারা। অন্যদের মধ্যে ভুটান ও মালদ্বীপ প্রথম ধাপেই ফাইজারের টিকা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কোভ্যাক্সের আওতায় সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে যে সব টিকা আসার কথা সেগুলোর মধ্যে ৩৫-৪০ শতাংশ চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক এবং ৬০-৬৫ শতাংশ দ্বিতীয় প্রান্তিকে পাওয়া যাবে।
ইতোমধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৭০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশের হাতে এসেছে। গত ২৭ জানুয়ারি চিকিৎসক-নার্সসহ করোনাভাইরাস মোকাবেলার একদল সম্মুখ যোদ্ধাকে টিকাদানের মাধ্যমে বাংলাদেশে বহু প্রতীক্ষার এই কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।
সেরাম থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার যে চুক্তি হয়েছে, সে অনুযায়ী প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া ভারত সরকার উপহার হিসেবে আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে।
কোভ্যাক্স চলতি বছরের প্রথমার্ধে অন্তত ৩৩ কোটি ডোজ টিকা বিতরণ করতে চায়। তার মধ্যে ২৪ লাখই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা।
কোভ্যাক্সের ভাষ্য অনুযায়ী, টিকা বণ্টনের অন্তর্বর্তীকালীন যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেই টিকা দিয়ে ১৪৫টি দেশের মোট জনসংখ্যার গড়ে ৩.৩ শতাংশকে টিকা দেওয়া হবে।
এদিকে ইউনিসেফের প্রধান হেনরিয়েটা ফোর বলেছেন, নতুন একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও নোভাভ্যাক্সের করোনাভাইরাস টিকার ১১০ কোটি ডোজ কোভ্যাক্সকে দেবে।
নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য প্রতি ডোজ ৩ ডলার করে কয়েক বছর ধরে এই টিকা দেবে তারা।