কোলন ক্যান্সার কি পুরোপুরি নিরাময় হয়?

0
419
Spread the love

কোলন অথবা বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার একটি জটিল রোগ।  সঠিক চিকিৎসা না নিলে স্বাভাবিক জীবন ধারন কঠিন হয়ে পড়ে। দিন দিন মৃত্যুর অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

কোলন ক্যান্সারের একটি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে কোলন কেটে ফেলা দেওয়া এবং রোগীকে বিকল্প পথে মলত্যাগের ব্যবস্থা করা।  ল্যাপারস্কপি পদ্ধতিতে অপারেশন এক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত তৈরি করেছে। এই পদ্ধতিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পেট না কেটে ও মলদ্বার অপসারণ না করে ক্যান্সারটি সম্পূর্ণরূপে ব্যবচ্ছেদ করে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হয়।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের ল্যাপারোস্কপিক ও কলোরেক্টাল সার্জন অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক।

মলাশয়ের ক্যান্সার সাধারণত পায়ুপথে রক্তক্ষরণ এবং মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। মলত্যাগের বেগ এলে রোগী তড়িঘড়ি করে টয়লেটে যায় ও শ্লেষ্মাযুক্ত রক্ত মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে আসে। প্রথম দিকে যেহেতু উপসর্গ তত মারাত্মক নয় রোগী নিজ থেকেই অনেক সময় চিন্তা করে যে হয়তো বা আমাশয় আক্রান্ত হয়েছে অথবা তার পাইলস হতে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

আমাদের দেশে পাইলস অথবা পেট খারাপ বা আমাশয় আক্রান্ত হওয়া বেশ সাধারণ ব্যাপার। ভেজাল, নষ্ট হওয়া খাবার-দাবারে অথবা রেস্তোরাঁয় খেয়ে পেট খারাপ বা মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তনকে সহজভাবে গ্রহণ করা আমাদের রোগীদের জন্য স্বাভাবিক। সে কারণে পায়ুপথে রক্তক্ষরণ, মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন, কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা পাতলা পায়খানা উপসর্গগুলো যে ক্যান্সারেরও উপসর্গ সেটা অনুধাবন করতে রোগীর অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে যদিও এর মাঝে ক্যান্সারটি বড় হয়ে মলাশয়/বৃহদন্ত্রের অকুস্থলের চারপাশে এবং পরবর্তী সময়ে ফুসফুস ও যকৃতে ছড়িয়ে যায়।

এ সময় পেটে ব্যথা হয়, মল আটকে গিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট ফুলে ওঠে। অপারেশান ছাড়া রোগ মুক্তির জন্য রোগী হাতুড়ে ডাক্তারসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে চিকিৎসার শরণাপন্ন হয়ে প্রকৃত চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যাওয়ার সুযোগ হারান।

ক্যান্সার মলাশয় এবং মলদ্বারের পাশের স্নায়ু ও মাংসপেশিতে ছড়িয়ে পায়ুপথে প্রচণ্ড ব্যথার জন্ম দেয়।

আগের দিনে সচরাচর পায়ুপথ বা মলদ্বার ফেলে দিয়ে পেটের ডান বা বাঁয়ের যে কোনো একপাশে কৃত্রিম মলদ্বার বানিয়ে সেখানে ব্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হতো। মল ওই ব্যাগে জমা হতো এবং রোগীকে সময়মতো মাঝে মাঝে ব্যাগ পরিষ্কার করে নিতে হতো।

এ স্থায়ী ব্যাগ লাগানো অনেক রোগীর কাছে অগ্রহণযোগ্য, সামাজিকভাবে অমর্যাদাপূর্ণ, অরুচিসম্মত হিসেবে গণ্য করে এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে যেভাবেই হোক রোগী স্থায়ী ব্যাগ পরিহার করার চেষ্টা করে। মলাশয় অথবা মলদ্বারের সাধারণ অসুখ যেগুলো ক্যান্সারের মতো মারাত্মক নয় যেমন- ফিশার, পাইলস, ইত্যাদির উপসর্গ এবং ক্যান্সারের উপসর্গ একই রকম হতে পারে।

রোগীর ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং কোলনস্কপি ও বায়োপসি করে রোগ নির্ণয়ের পর সিটি এবং এমআরআই দ্বারা স্টেজিং করার পরই চিকিৎসা প্রণালি নির্ধারণ করে চিকিৎসা শুরু করা হয়।

আগে প্রচলিত অথবা অত্যাধুনিক অস্ত্রোপচারেই মলাশয় এবং বৃহদন্ত্রের ক্যান্সারের চিকিৎসার মুখ্য পদ্ধতি। আধুনিক পদ্ধতিতে ল্যাপারস্কপি বা রোবটের মাধ্যমে অপারেশন করে আশপাশের গ্লান্ড যেখানে ক্যান্সার ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে সেই গ্লান্ডসহ ক্যান্সারটিকে সম্পূর্ণ অপসারণ করা।
প্রায় নব্বই ভাগেরও বেশি ক্ষেত্রে পেট না কেটে ও মলদ্বার অপসারণ না করে ক্যান্সারটি সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া সম্ভব হয়। অপারেশানের আগে অথবা পরে কেমোথেরাপি অথবা/এবং রেডিওথেরাপির প্রয়োজন আছে কিংবা নেই সেটা নির্ভর করে ক্যান্সার স্টেজিংয়ের ওপর।

ল্যাপারস্কপির মাধ্যমে অস্ত্রেপচারের পর মলদ্বার অক্ষত থাকে, রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে, ক্যান্সার থেকে আরোগ্য পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় এবং দ্রুত স্বাভাবিক কাজকর্ম ফিরে যেতে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে