“শরীরের অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির মাধ্যমেই সকল ক্যান্সারের উৎপত্তি”। প্রতিটি মানুষের শরীরে ক্যান্সার কোষ রয়েছে। যখন চিকিৎসকরা ক্যান্সার রোগীদের বলেন যে চিকিৎসার পরে তাদের শরীরে আর কোন ক্যান্সার কোষ নেই। এর মানে হল পরীক্ষাগুলি ক্যান্সার কোষ সনাক্ত করতে অক্ষম। কারণ, তারা সনাক্তযোগ্য আকারে পৌঁছেনি ।
একজন ব্যক্তির জীবদ্দশায় ক্যান্সার কোষ ৬ থেকে ১০ বারের বেশি বিভাজিত হয়। যখন ব্যক্তির ইমিউনসিস্টেম শক্তিশালী হয় তখন ক্যান্সারকোষ গুলি ধ্বংস হয়ে যায় এবং সংখ্যাবৃদ্ধি এবং টিউমার গঠন থেকে প্রতিরোধ করে। যখন একজন ব্যক্তির ক্যান্সার হয় তখন এটি নির্দেশ করে যে ব্যক্তির পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে। এগুলি জিনগত কারণে হতে পারে, তবে পরিবেশগত, খাদ্য এবং জীবনধারার কারণেও
হতে পারে ।
*একাধিক পুষ্টির ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে, আরও পর্যাপ্ত এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জন্য ডায়েট পরিবর্তন করা, দিনে ৪-৫ বার এবং সম্পূরকগুলি অন্তর্ভুক্ত করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করবে।
*কেমোথেরাপির মধ্যে দ্রুত বর্ধনশীল ক্যান্সার কোষগুলিকে বিষাক্ত করা হয় এবং অস্থি মজ্জা, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল
ট্র্যাক্ট ইত্যাদিতে দ্রুত বর্ধনশীল সুস্থ কোষগুলিকে ধ্বংস করে এবং লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুস ইত্যাদির মতো অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে।
* ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার সময় বিকিরণ সুস্থ কোষ, টিস্যু এবং অঙ্গগুলিকে পুড়িয়ে, দাগ এবং ক্ষতি করে।
* কেমোথেরাপি এবং বিকিরণ দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রায়শই টিউমারের আকার হ্রাস করে। তবে কেমোথেরাপি এবং
রেডিয়েশনের দীর্ঘায়িত ব্যবহারের ফলে টিউমার ধ্বংস হয় না।
* যখন শরীরে কেমোথেরাপি এবং বিকিরণ থেকে অত্যধিক বিষাক্ত বোঝা থাকে তখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে
যায়, তাই ব্যক্তিবিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ এবং জটিলতার শিকার হতে পারে।
* কেমোথেরাপি এবং রেডিয়শেন ক্যান্সার কোষগুলিকে পরিবর্তন করতে পারে এবং প্রতিরোধী এবং ধ্বংস করা কঠিন
হতে পারে। অস্ত্রোপচারের ফলে ক্যান্সার কোষগুলি অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
* ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার একটি কার্যকর উপায় হল ক্যান্সার কোষ গুলিকে বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খাবার
না খাওয়ানো ।
এসব ভাবনা নিয়েই আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা। আমাদের শরীর বিভিন্ন সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত। আর এই সিস্টেমের অসামঞ্জস্যপরিচালনার জন্যই ক্যান্সারের উৎপত্তি। এই সিস্টেম পরিচালনা যদি স্বাভাবিক করতে পারে তবেই মিলবে ক্যান্সার রোগ প্রতিকারে সফলতা। এই সিস্টেমকে পরিচালনা করতে শরীরে এন্টিবডি তৈরি করতে হবে। যা কিনা এন্টিজেনের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। আর এই এন্টিবডি তৈরি করতে শরীরে ইমিউনসিস্টেমকে বাড়িয়ে শরীরের ডিফেন্স ম্যাকানিজমকে উন্নত করতে পারে। যা কিনা হোমিওপ্যাথিক অর্গাননের ভাইটাল প্রিন্সিপাল রূপে খ্যাত রয়েছে।
এই অবস্থায় রেপাটরি অনুসারে প্রতিটি সিস্টেম-এর জন্য প্রথম গ্রেড থেকে তৃতীয় গ্রেড পর্যন্ত ঔষধ নির্বাচনের সু-ব্যবস্থ্যা রয়েছে। শরীর গঠন, মানসিক, সমষ্টিগত ও অঙ্গভিত্তিকসহ সমস্ত লক্ষণের উপর ভিত্তি করে ঔষধ নির্বাচন করা যায়। আধুনিক যুগে প্যাথোলজিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে ঔষধ নির্ণয় করে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
ধরা যাক একজন রোগীর ফুসফুস ক্যান্সার ধরা পড়েছে, বায়োপসির মাধ্যমে সে রোগটা কোন স্টেজে রয়েছে, কোন ধরনের ক্যান্সার, কয়টা অর্গানকে আক্রান্ত করেছে সে সব লক্ষণের ওপর ভিত্তি করে ঔষধ নির্বাচন করা যায়। সাধারণ যে লক্ষণগুলো ধরা পড়ে যেমন বুকে
ব্যথা, কাশির সাথে রক্ত, ওজন কমে যাওয়া, অবসাদগ্রস্ত হওয়া, খাবারে অরুচি, ঠাণ্ডা গরম বৃদ্ধি আরো আনুসাঙ্গিক কিছু সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন। এই অবস্থায় চিকিৎসক ঐ সিস্টেম এর ওপর ভিত্তি করে রিপোর্ট র্যাপাটোরাইজেশন করে ঔষধ নির্বাচনের মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ রাখা সম্ভব। এই ভাবে যদি আমরা প্রত্যেকটা সিস্টেমকে সচল রাখতে পারি তাহলে ক্যান্সার রোগীকে দীর্ঘদিন ভালো রাখা সম্ভব। এতে রোগী ও রোগীর পরিবার ভালো থাকে।
তাই ক্যান্সার রোগীকে লক্ষণ ভিওিক চিকিৎসার মাধ্যমে, তাকে পুরোপুরি ভালো না করতে পারলেও অন্তত দীর্ঘ সময় রোগীকে ভালো রাখা সম্ভব।
লেখক:
ডা. মো: রাশিদুল হক
সাবেক সিনিয়র কনসালটেন্ট, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল