যে কোনো রোগ প্রতিরোধ নির্ভর করে রোগটির কারণ চিহ্নিতকরণ ও তা দূরীকরণের ওপর। ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কারণ অনেক। অধিকাংশ কারণের আচরণও আবার সুস্পষ্ট নয়। ফলে ব্যাপারটি কঠিন। অক্টোবর মাসে স্তন ক্যান্সারের সচেতনতা তৈরি করে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। এবং তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।
আশার কথা-
প্রাথমিক পর্যায়ে ৮০ শতাংশ ক্যান্সারই প্রতিরোধ করা যায়।
ক্যান্সার হওয়ার একটি কারণ?খাদ্যদ্রব্য। ৩০ শতাংশ ক্যান্সারের জন্য দায়ী খাদ্যদ্রব্য। ধূমপানজনিত কারণে ক্যান্সার হয় ৩০ শতাংশ। হৃদরোগ, ক্যান্সার ও স্ট্রোক আমাদের পূর্ণ বয়স সীমায় পৌঁছার আগেই জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে দেয়। উন্নত দেশের তথ্য থেকে জানা যায়, নারীদের ফুসফুস ক্যান্সার ছাড়া সব ধরনের ক্যান্সারে মৃত্যুহার কিছুটা কমে এসেছে। এটা সম্ভব হয়েছে রোগ নির্ণয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, চিকিৎসকদের অভিলব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতা এবং জীবনধারার পরিবর্তনের ফলে।
প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিরোধ : অভ্যাস ও জীবন-যাপনের পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করে নিজে নিজেই প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশে মুখ, ফুসফুস, কণ্ঠ, গলনালি, খাদ্যনালির ক্যান্সার বেশি। মূলত এজন্য দায়ী তামাকপাতা ও তামাকপাতা দিয়ে তৈরি দ্রব্য (যেমন- জর্দা, দোকতা, কিমাম ইত্যাদি) সেবন এবং ধূমপানের অভ্যাস।
তামাকপাতা চিবানোয় আমাদের দেশে ২০ শতাংশ মানুষ মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। পৃথিবীর যেসব দেশে এ কুঅভ্যাস নেই, সেখানে মুখের ক্যান্সারের হার ১ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ। ফুসফুসের ক্যান্সারের ৮০ শতাংশেরও বোশ হয় ধূমপানের কারণে। অধূমপায়ীর তুলনায় ধূমপায়ীর মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার ২০ গুণ বেশি। এটি ৬০ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন করা থেকে বিরত থাকলে বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ ক্যান্সার কমানো সম্ভব।
দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রতিরোধ : সার্জারি, রেডিওথেরাপি ও কোমোথেরাপির মাধ্যমে সাধারণভাবে ৩৫ শতাংশ ক্যান্সার রোগীকে সম্পূর্ণভাবে সারিয়ে তোলা সম্ভব। এ হার বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ উন্নীত করা যায়, যদি রোগের শুরুতে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। ধূমপানে নেশা হয় এবং শারীরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।
তামাকের কারণে শারীরিক ক্ষতি : এ কারণে যে ধরনের ক্ষতি হয় তা হলো- স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, ক্যান্সার হয়, স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে হয়, পক্ষাঘাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, হাঁপানি হয়, দাঁতের রোগ বা দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় হয়, মতিভ্রম বা সময়ের আগে জন্ম নেয়া কম ওজন্সম্পন্ন শিশু জন্ম নিতে পারে।
অর্থনৈতিক ক্ষতি : স্বাস্থ্যজনিত ক্ষতি (রোগীর চিকিৎসা, অকালমৃত্যু ও পঙ্গুত্ব) ৫ হাজার কোটি টাকা (আয় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। নিট ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা)। মদ্যপান শুধু যকৃতের ক্যান্সারের জন্যই দায়ী নয়, এটি মুখ, গলনালি ও খাদ্যনালির ক্যান্সারের জন্যও দায়ী। বিশেষ করে ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে। বেশি বেশি চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ, বিশেষ কতগুলো ক্যান্সার সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। যেমন- বৃহদন্ত্র, স্তন ও প্রোস্টেট ক্যান্সার। পক্ষান্তরে, বেশি বেশি ‘ফাইবার’ যুক্ত (শাক-সবজি) খাদ্য বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। শুরুতেই সচেতন থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখা ভালো।
লেখক : ডা. এটিএম কামরুল হাসান
অনকোলজিস্ট ও ক্যান্সার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ; সিএমও,
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউিট, মহাখালী, ঢাকা।