জরায়ুমুখ ক্যান্সারকে সার্ভিক্যাল ক্যান্সার বা জরায়ুমুখের ক্যান্সার বলে। ভারতীয় উপমহাদেশে জরায়ুমুখ ক্যান্সার বেশি দেখা যায়। প্রতিবছর যত নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, তাদের অর্ধেকের বেশিই মারা যায়। ৯৯.৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জন্য এইচপিভি ভাইরাস দায়ী। এই ভাইরাস যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়।
কাদের ঝুঁকি বেশি
♦ কম বয়সে বিয়ে
♦ কম বয়সে বাচ্চা নেওয়া, ঘন ঘন বাচ্চা নেওয়া
♦ পারসোনাল হাইজিন না মেনে চলা
♦ অসচ্ছলতা
♦ যৌনবাহিত রোগ
♦ স্বামী, ট্রাক ড্রাইভার বা শিপিং অথবা ডে লেবার
♦ বহুগামিতা (স্বামী/স্ত্রী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য)
♦ স্বামীর প্রথম স্ত্রী সার্ভিক্যাল ক্যান্সারে মারা যাওয়া
লক্ষণ
♦ দুর্গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব
♦ অনিয়মিত রক্তস্রাব
♦ সহবাস-পরবর্তী রক্তস্রাব
♦ ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে বেশি হয়
চিকিৎসা
প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে শতভাগ চিকিৎসা সম্ভব। প্রাথমিক অবস্থা নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন স্ক্রিনিং পদ্ধতি আছে। এসবের মধ্যে পেপস স্মেয়ার, ভায়া অন্যতম।
প্রতি তিন বছর অন্তর এসব পরীক্ষা করাতে হয়। অ্যাডভান্স অবস্থায় ডায়াগনসিস হলে অপারেশন অথবা রেডিওথেরাপি অথবা দুটি দিয়েই চিকিৎসা করা হয়।
প্রতিরোধ
ভ্যাকসিন দিয়ে এবং কিছু নিয়ম-কানুন মেনে এই ক্যান্সারকে হটিয়ে দেওয়া যায়। রিস্ক ফ্যাক্টর অ্যাভয়েড করা, জেনিটাল হাইজিন মেইনটেন করা, ধর্মীয় অনুশাসন প্রভৃতি মেনে চললে এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
প্রতিরোধক হিসেবে টিকা দেওয়া যায়, যা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এই টিকা ০.৫ এমএল/অ্যাম্পুল/আইএম মাংসে দিতে হয়। আর এই টিকা ৭.৪ বছর পর্যন্ত নিরাপত্তা দেবে। টিকার পর এটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অন্য সাধারণ ভ্যাকসিনের মতোই। গর্ভাবস্থায়ও দেওয়া যাবে। তবে নতুন করে দিতে হলে গর্ভাবস্থার পরে দিলেই ভালো।
ভ্যাকসিন নিয়ে যা জানতে হবে
টার্গেট গ্রুপ—৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী কন্যাশিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়া যায়। কমপ্লিমেন্টারি গ্রুপ—২৬ বছর বয়স পর্যন্ত। এ ছাড়া সেক্সুয়ালি অ্যাক্টিভ যে কেউ দিতে পারবে। ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত দুই ডোজ দিতে হয়। ১৫ বছরের পরে তিন ডোজ লাগবে। প্রথম ডোজের ছয় মাস পর দ্বিতীয় ডোজ (অনূর্ধ্ব-১৪ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে) দিতে হয়। প্রথম ডোজের এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ, দ্বিতীয় ডোজের ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ (১৫ বছর এবং তার ঊর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে) দিতে হয়। অল্প বয়সী মেয়ে যাদের সেক্সুয়াল এক্সপোজার হয়নি, তাদের স্ক্রিনিং দরকার নেই। যাদের এক্সপোজার হিস্ট্রি আছে, তাদের স্ক্রিনিং করে নেওয়া ভালো।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. ছাবিকুন নাহার
প্রসূতি ও গাইনি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা