র্যাবিস ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো কুকুর, বিড়াল, বানর, শিয়াল, বাদুড়, বেজিসহ অন্যান্য বন্য প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ের কারণে জলাতঙ্ক (র্যাবিস) রোগ হয়। জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসা নেই। একবার জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে মৃত্যু নিশ্চিত। তাই টিকা নিয়ে রোগটি প্রতিরোধ করতে হবে।
কোন কোন প্রাণী কামড় বা আঁচড় দিলে জলাতঙ্ক রোগের টিকা নিতে হবে?
♦কুকুর ♦বিড়াল ♦বানর ♦শিয়াল ♦খেঁকশিয়াল ♦বেজি ♦বাদুড়
তবে ইঁদুর, চিকা ও খরগোশ কামড়ালে জলাতঙ্কের টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ
কুকুর বা বিড়াল কামড় বা আঁচড় দিলে পাঁচ দিন থেকে এক বছরের মধ্যেও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
লক্ষণগুলোর মধ্যে থাকে :
♦ ক্ষতস্থানে জ্বালাপোড়া, অবশ ভাব
♦ জ্বর, গা ব্যথা, বমিভাব
♦ মানসিক বিকারগ্রস্ততা (উত্তেজিত হওয়া)
♦ আলো, বাতাসের প্রতি সংবেদনশীল হওয়া, সহ্য করতে না পারা
♦ পানি পানে আতঙ্ক। পানি পান করতে দিলে ভয় পাওয়া।
কামড় বা আঁচড় দিলে করণীয়
♦ ক্ষতস্থান বাংলা সাবান দিয়ে ১৫ মিনিট ধরে ট্যাপের পানির ধারায় ধুতে হবে।
♦ জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধে এআরভি টিকা এবং আরআইজি (র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবুলিন ক্যাটাগরি ৩-এর জন্য) টিকা নিতে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করতে হবে।
সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধে মোট তিনবার টিকা নিতে হয়। কামড় বা আঁচড় দেওয়ার দিন, তৃতীয় ও সপ্তম দিন (যদি সরকারি প্রটোকল অনুসরণ করে চামড়ায় টিকা দেওয়া হয়)।
অন্যথায় মোট চারটি টিকা দিতে হয়। কামড় বা আঁচড় দেওয়ার দিন, তৃতীয়, সপ্তম ও চৌদ্দতম দিন। এ ক্ষেত্রে টিকাগুলো মাংসে দেওয়া হয়।
ক্ষতস্থানের ক্যাটাগরি কী ও কেন?
চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কুকুর বা বিড়ালের আঁচড়জনিত ক্ষতস্থানকে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়।
ক্যাটাগরি ১ : এতে কুকুর বা বিড়ালের সংস্পর্শে আসাকে, খাওয়ানোকে বোঝায়।
এতে কোনো কামড় বা আঁচড়ের দাগ থাকে না বা রোগীও বুঝতে পারে না। এ জন্য কোনো টিকা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
ক্যাটাগরি ২ : এতে কামড় বা আঁচড়ের দাগ থাকে। কিন্তু রক্ত গড়িয়ে পড়ে না। এ ক্ষেত্রে টিকা এআরভি লাগবে। কিন্তু অ্যান্টিবডি (ইআরআইজি) লাগবে না।
ক্যাটাগরি ৩ : এতে ক্ষতস্থান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে টিকা এআরভি ও অ্যান্টিবডি (প্রথম দিন) দুটিই লাগবে। মুখমণ্ডলে ক্যাটাগরি ২-কেও ক্যাটাগরি ৩ বলে ধরা হবে।
পরিশেষে মনে রাখবেন, একমাত্র সচেতনতাই জলাতঙ্ক রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে।
– পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. মোরশেদ আলী
জেনারেল ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন
পার্কভিউ হাসপাতাল