স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের গুজব ছড়িয়ে অবৈধভাবে অর্থ আয়ের পাঁয়তারা করছে একটি অসাধু চক্র। সরকারি চাকরির বয়স শেষ এমন ৩৭০ জনকে নিয়োগ দেয়ার নামে তারা গোপনে অর্থ সংগ্রহে মাঠে নেমেছে। জনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে। প্রার্থীদের আশ্বস্ত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার নাম।
এ সংক্রান্ত একাধিক অডিও রেকর্ড যুগান্তরের হাতে এসেছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, এমন তথ্য তাদের জানা নেই। অস্বচ্ছ এ প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি টাকা লেনদেনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, এই নিয়োগের বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি। এ সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্তও হয়নি। অসাধু চক্রটি নিজেদের স্বার্থে হঠাৎ করেই নতুন নিয়োগের গুজব ছড়িয়েছে। এক্ষেত্রে তারা করোনার সময় বয়স ও যোগ্যতা প্রমার্জনা করে কয়েকজনের নিয়োগের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে। এতে তাদের প্রচারণা জোরদার হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের বয়স শেষ এমন কয়েকজন যুগান্তরকে বলেন, তাদের নেতৃত্বে আছেন এ ধরনের দু’একজন চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন বিশেষ ব্যবস্থায় আমাদের নিয়োগ দেয়া হবে।
যুগান্তরের হাতে আসা অডিও রেকর্ডগুলো থেকে জানা যায়, একটি গ্রুপ স্বেচ্ছাসেবী এবং বয়সোত্তীর্ণ মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ফোন করে তাদের বিশেষ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করছেন। মন্ত্রণালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এবং ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার ভাইয়ের নাম ব্যবহার করে আগ্রহী সবাইকে টাকা সংগ্রহে রাখতে বলা হচ্ছে। চাওয়ামাত্রই যেন টাকা দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। অথচ এর আগে প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদে নিয়োগ না দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর ও টেকনোলজিস্টদের দুই সংগঠনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক প্রশাসন ডা. হাসান ইমাম যুগান্তরকে বলেন, চাকরির বয়স শেষ এমন কাউকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে নিয়োগের কোনো সার্কুলার জারি হয়নি। সরকারি চাকরিতে এর কোনো সুযোগও নেই। এমন কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে আমার জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ১২শ’ টেকনোলজিস্টের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বাইরে আর কিছু চলমান নেই।
এর আগে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১২০০ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু হঠাৎ করে জুন মাসে অধিদফতরের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তার (যাকে অবসরোত্তর কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত করেন তৎকালীন মহাপরিচালক) নেতৃত্বে একটি দুর্নীতিবাজ চক্র অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ১৮৩ জন টেকনোলজিস্টের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে। এসব অনিয়ম বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও তদন্ত না করে রোববার ও সোমবার ১৮৩ জনকে সশরীরে হাজির হয়ে কাগজপত্র দাখিল করতে বলা হয়। তাদের মধ্যে ১৫৭ জন হাজির হয়ে কাগজপত্র জমা দেন।
কাগজপত্রগুলো বাছাই করে দেখা যায়, সরকারি মেডিকেল ফ্যাকাল্টি থেকে পাস করা ৯৫ জন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ৫০ জন, বিএসসি-ইন টেকনোলজি পাস করা ৯ জন, সনদবিহীন প্রার্থী দু’জন এবং ডিপ্লোমা-ইন-ফার্মেসি পাস করা একজন প্রার্থী নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এই বিষয়গুলো জানাজানি হলে সমস্যা সমাধান না করে রাষ্ট্রপতির প্রমার্জনায় তাদের নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়।
এই কাজে সাবেক একজন সচিব, প্রভাবশালী চিকিৎসক নেতা জড়িত থাকলেও তাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সেই সময়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালককে (প্রশাসন) বদলি করে এই অসাধু প্রক্রিয়া হালালের চেষ্টা করা হয়।
যদিও এর আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে টেকনোলজিস্ট নেয়ার প্রস্তাবনা ছিল। কিন্তু অধিদফতর থেকে মানসম্পন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য আউটসোর্সিংয়ের পরিবর্তে স্থায়ীভাবে টেকনোলজিস্ট নিয়োগের সুপারিশ করে ২৯ এপ্রিল চিঠি দেয়া হয়।
এ বিষয়ে বেকার অ্যান্ড প্রাইভেট সার্ভিসেস মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ৬ দফার ভিত্তিতে আমাদের সঙ্গে অধিদফতরের সমঝোতা হয়েছিল। আমরা অবিলম্বে তার বাস্তবায়ন চাই। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ১২শ’ পদ সৃষ্টির নির্দেশ দিয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর বাইরে কোনো অসাধু প্রক্রিয়ায় স্বেচ্ছাসেবক ও বয়সোত্তীর্ণ তকমা দিয়ে নিয়োগ দেয়া হলে তা মেনে নেয়া হবে না।
সূত্রঃ যুগান্তর