স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের ক্যান্সার সমূহের মধ্যে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। ডিম্বাশয় বা ওভারির এপিথেলিয়াম বা আবরণে যে ক্যান্সার শুরু হয় তাই ‘ডিম্বশয়ের ক্যান্সার’। ডিম্বাশয়, ডিম্বনালি এবং পেরিটোনিয়ামের ক্যান্সার ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, এদের উপসর্গগুলো একরকম তাই এদের চিকিৎসা পদ্ধতিও একইরকম। এ ক্যান্সারগুলো শুরু হয় যখন শরীরের এসব অংশের সুস্থ কোষ পরিবর্তিত হয়ে অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন শুরু হয়।
উপসর্গ : এ রোগের সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো উপসর্গ নেই। তবে নিচের লক্ষ্মণগুলো যদি সাম্প্রতিক সময়ে (১ বছরের কম সময়ের মধ্যে) দেখা দেয় এবং মাসে ১২ দিনের বেশি স্থায়ী হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ১. পেট ফুলে যাওয়া বা স্ফীত হওয়া। ২. পেটে ব্যথা অনুভব করা। ৩. খাবারে অরুচি অথবা অল্প খাওয়ার পরই পেট ভরা অনুভব করা। ৪. পেটে কোনো চাকা অনুভব করা। ৫. ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হওয়া।
ঝুঁকিতে বেশি যারা : ১. ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে বা নিজের স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে (জেনেটিক মিউটেশনের কারণে) ২. ৩৫ বছরের পরে প্রথম গর্ভধারণ অথবা যারা কখনো পূর্ণ মেয়াদি গর্ভধারণ করেননি। ৩. মেনোপজের পরে হরমোন থেরাপি। ৪. স্থূলকায়। ৫. অল্প বয়সে মাসিক শুরু এবং বেশি বয়সে মেনোপজ হলে। ৬. অধিক বয়স্ক নারী।
তবে মনে রাখতে হবে উপরোক্ত কোনো ঝুঁকি না থাকলেও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হতে পারে।
রোগ শণাক্তকরণ : মাত্র ২০% ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ শণাক্ত করা যায়। তাই উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাইনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
চিকিৎসা : মূলত ক্যান্সারের ধরন, পর্যায় এবং রোগীর বয়স ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর চিকিৎসা নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসার বিকল্পগুলো হচ্ছে
১। সার্জারি : ওভারিয়ান ক্যান্সারে সার্জারিই হচ্ছে মূল চিকিৎসা তবে বেশির ভাগ রোগীর সার্জারির পরে কেমোথেরাপি লাগে। যদি ক্যান্সার ছড়িয়ে যাওয়ার পর ধরা পড়ে, তাহলে অনেক সময় প্রথমে কেমোথেরাপি দিয়ে সার্জারি করা লাগতে পারে।
২। কেমোথেরাপি ৩। টারগেটেড থেরাপি।
শেষ কথা : ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে যেহেতু উপসর্গ কম কিন্তু মৃত্যুহার বেশি, তাই কোনো উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। মনে রাখবেন, এসব ক্ষেত্রে প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।
লেখক:
ডা. রাহেলা খাতুন
গাইনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড, মিরপুর-১০, ঢাকা।