ত্বক সাদা হলেই কি শ্বেতী রোগ, কী করবেন?

0
335
Spread the love

শ্বেতী রোগ আমাদের দেশে খুবই পরিচিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। চলাফেরায় বহু মানুষকে আমরা এই রোগ বহন করে চলতে দেখি। আবার শ্বেতী রোগ নিয়ে কিছু মিথও সমাজে প্রচলিত আছে।

ত্বক সাদা হলেই অনেকে ধরে নেয় শ্বেতী রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে। শ্বেতী রোগ নির্ণয়ের উপায় ও চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ত্বক এবং যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রাশেদ মো. খান।

আমাদের ত্বকের মেলানোসাইট কোষ থেকে মেলানিন নামক পিগমেন্ট বা রঞ্জক পদার্থ উৎপন্ন হয়।  কোনো কারণে এই কোষ নষ্ট হয়ে গেলে ধীরে ধীরে ত্বক সাদা হয়ে যায়।

ত্বক সাদা হলেই কী শ্বেতী রোগ?

ত্বক সাদা হওয়ার অনেক কারণ আছে। রক্তনালির কোনো অংশ সংকুচিত হয়ে গেলে সেই অংশ সাদা হয়ে যায়। শিশু বয়স থেকে লাল বা বাদামি রঙের তিল ছাড়াও সাদা রঙের তিল হতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি বড় হয়, তখন একে নেভাস অ্যামিনিকাস বলে। রোদে পুড়ে গেলে বা সানবার্ন হলে ত্বকের কিছু পুড়ে গিয়ে সাদা ছোপ পড়ে। কিছু ফাঙ্গাল ইনফেকশন আছে, যাকে ভারসিকালার বলে, যা ছোদ বা ছুলি নামে পরিচিত। সেখানেও সাদা হতে পারে।

কখন ও কীভাবে নির্ণয় করা হয়

২০ বছর বয়সের পর থেকে শ্বেতী রোগ বেশি হয়, তবে এটি যে কোনো বয়সে হতে পারে। পরিবারের কারও শ্বেতী থাকলে পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে শতকরা ২০ জনের এ রোগ হতে পারে। শ্বেতী কখনই ছোঁয়াচে নয়, সংক্রামকও নয়।

ত্বক বিশেষজ্ঞরা উডস ল্যাম্প নামক একটি যন্ত্র দিয়ে ত্বক পরীক্ষা করলে দুধের বা চকের মতো সাদা চকচকে ত্বক দেখা যায়। তখন একে শ্বেতী বলে ধরা যায়। মুখের চারদিকে, আঙুলের মাথায়, হাতের পাশে শ্বেতী রোগ বেশি হয়। শ্বেতী রোগ হলে খাবার নির্বাচনে কোনো বিধিনিষেধ নেই। তবে বেশি ডোজে কেউ প্রতিনিয়ত ভিটামিন-সি খেলে রঙ তৈরি করার পাথওয়েতে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।

কী করবেন

অনেকের ধারণা, শ্বেতী কখনই ভালো হয় না। শুরুতেই এর চিকিৎসা করা ভালো। দেরিতে এলে ও পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়লে তখন চিকিৎসা দুঃসাধ্য হয়ে যায়।  এর চিকিৎসায় ২০ শতাংশ হাইড্রোকুইনোন মলম দেওয়া হয়।  তবে লক্ষ রাখতে হবে, এ মেলানিন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়।  শ্বেতী রোগীদের ত্বকের এ প্রটেকশন নেই বলে রোদে বের হওয়ার আগে ছাতা বা মোটা কাপড় পরে বের হতে হবে এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

এ রোগীদের চুল এবং লোমও সাদা হয়ে যেতে পারে। তাই শরীরের যে অংশে লোম আছে, সেখানে শ্বেতী হলে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়। ঠোঁট, আঙুলের মাথার শ্বেতী হলে ভালো করা কষ্টকর। শ্বেতী রোগে সাধারণত চুলকানি হয় না। তবে শ্বেতীর সঙ্গে অ্যাকজিমা হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে ত্বকে চুলকানি হতে পারে।

কারও ত্বকে শ্বেতী হলে সমাজের অনেকেই ভাবেন এটি বোধ হয় কুষ্ঠরোগ। তখন তারা রোগীর সঙ্গে মিশতে চান না। এ জন্য রোগী ও পরিবারের সদস্যদের কাউন্সেলিং দরকার হয়। শ্বেতী রোগীদের কসমেটিক মেকআপ করে সাদা অংশ ঢেকে দেওয়া যায়, একে কসমেটিক কেমোফ্লাক্স বলে।

শ্বেতীর যে অংশ মেলানোসাইট একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে, সেখানে যত ওষুধই দেওয়া হোক না কেন, সে ক্ষেত্রে ত্বকের ভালো অংশ থেকে কোষ নিয়ে সাদা অংশ মিনিপাঞ্চ গ্রাফটিং করা হয়। এ ছাড়া মেলানোসাইট ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা কালচারও করা যায়। এ ছাড়া ফটোথেরাপি বা নেরোবেন্ডইউভিবিও কার্যকরী চিকিৎসা। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এ থেরাপি নিতে হয়।

আধুনিক গবেষণায় নতুন নতুন কার্যকরী চিকিৎসা এখন প্রেসক্রাইব করা হয়। এ রোগীদের সবসময় সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকতে হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে