দ্রুত বীর্যপাত (Premature Ejaculation) একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেক পুরুষকে প্রভাবিত করে। এটি মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বা শারীরিক কারণে হতে পারে। এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার জন্য কিছু বিশেষ ব্যায়াম এবং কৌশল রয়েছে। এখানে কয়েকটি কার্যকর ব্যায়াম এবং পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:
১. কেগেল এক্সারসাইজ:
কেগেল ব্যায়াম মূলত পেশী শক্তিশালী করার জন্য করা হয়, যা বীর্যপাত নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
কিভাবে করবেন:
- প্রথমে জানুন কোন পেশীগুলি লক্ষ্য করতে হবে: যখন আপনি প্রস্রাব করতে যান এবং আকস্মিকভাবে প্রস্রাব থামান, তখন যে পেশীগুলি ব্যবহার করেন, সেগুলো হল পেলভিক ফ্লোর পেশী।
- এই পেশীগুলি টানুন এবং ৫-১০ সেকেন্ড ধরে ধরে রাখুন, তারপর ছেড়ে দিন।
- এই ব্যায়ামটি দিনে ৩-৪ বার ১০-১৫ বার করুন।
২. ডায়াফ্রাম্যাটিক শ্বাস-প্রশ্বাস:
ডায়াফ্রাম্যাটিক শ্বাস-প্রশ্বাস ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে সাহায্য করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
কিভাবে করবেন:
- সোজা হয়ে বসুন বা শুয়ে পড়ুন।
- গভীরভাবে শ্বাস নিন আপনার পেটের পেশী ব্যবহার করে, এটি ফুলিয়ে তুলুন।
- শ্বাস ধরে রাখুন কয়েক সেকেন্ডের জন্য এবং ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন।
- এটি নিয়মিতভাবে করুন, বিশেষ করে যখন আপনি উদ্বিগ্ন অনুভব করেন।
৩. ব্যালান্স এক্সারসাইজ:
ভারসাম্য এবং মাংসপেশী নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যায়ামও কার্যকর। এটি শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- কিভাবে করবেন:
- এক পায়ে দাঁড়ান এবং ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ধরে থাকুন।
- পরিবর্তন করুন এবং অন্য পায়ে দাঁড়ান।
৪. এয়ার সাইক্লিং:
এটি পা এবং পেটের পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, যা যৌন কার্যকলাপে সহায়ক।
- কিভাবে করবেন:
- শুয়ে পড়ুন এবং পা দুইটি উপরে তুলুন।
- পায়ের সাইকেল চালানোর মতো গতিতে পা চালান।
৫. রিলাক্সেশন টেকনিক:
মন এবং শরীরকে শিথিল করতে বিভিন্ন রিলাক্সেশন কৌশল ব্যবহার করুন, যেমন:
- যোগব্যায়াম: শারীরিক এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- মেডিটেশন: মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
৬. এভয়ড স্ট্রেস:
আপনার মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন। এটি আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
৭. যৌন অবস্থানের পরিবর্তন:
কিছু বিশেষ যৌন পজিশন দ্রুত বীর্যপাত নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। যেমন, মহিলার ওপর বসা বা পাশের অবস্থান, যেখানে আপনি অধিক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন।
৮. এস্কেপ টেকনিক:
যখন আপনি অনুভব করেন যে বীর্যপাত আসছে, তখন কিছু সময়ের জন্য থেমে যান এবং আবার শুরু করুন।
উপসংহার:
দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা প্রতিরোধে এই ব্যায়াম এবং কৌশলগুলি কার্যকর হতে পারে। তবে যদি সমস্যা চলতে থাকে, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক চিকিৎসা এবং পদ্ধতির মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
লেখকঃ
ডা. এম ইয়াছিন আলী
নিউরোলজিক্যাল ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল
ধানমন্ডি, ঢাকা ।