পেডিয়াট্রিক আইসিইউ: বর্তমান অবস্থা ও প্রয়োজনীয়তা

0
321

পেডিয়াট্রিক আইসিইউ বা শিশু নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র হচ্ছে হাসপাতালের একটি বিশেষ বিভাগ যেখানে গুরুতর অসুস্থ শিশুদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এখানে শিশু বলতে ‘০ থেকে ১৮ বছর’ বয়সীদের বোঝানো হলেও, পেডিয়াট্রিক আইসিইউ’র জন্য হাসপাতাল প্রটোকল অনুযায়ী সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারিত হয়।

সাধারণত এক মাস ও তার পরবর্তী বয়সের গুরুতর অসুস্থ শিশুরা পেডিয়াট্রিক আইসিইউতে চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকে। আর এক মাসের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য ‘নবজাতক আইসিইউ’ বা এনআইসিইউ। পেডিয়াট্রিক আইসিইউতে প্রশিক্ষিত ডাক্তার নার্সের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতির উপস্থিতি বা ব্যবহার সময়মতো সঠিক চিকিৎসা প্রদানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

শিশুদের বিভিন্ন গুরুতর অসুস্থতা যেমন- গুরুতর নিউমোনিয়া, অ্যাজমাজনিত শ্বাসকষ্ট, হার্ট-ফেইলিউর, হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা, হৃদপিণ্ড কাজ না করার ঝুঁকি, কিডনি ফেইলিউরজনিত জটিলতা, বয়স অনুযায়ী ব্লাড প্রেসারের তারতম্য, ব্রেইনের ইনফেকশন (মেনিনজাইটিস, এনসেফালাইটিস), দীর্ঘসময় খিঁচুনী, ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা (ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস) জিবিএসজনিত হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এইসব পরিস্থিতিতে শ্বাস-প্রশ্বাস, ব্লাড-প্রেসার, হৃদস্পন্দনের গতি এবং শরীরের লবণ, পানি, অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এমতাবস্থায়, সময় ও প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান প্রয়োজন, যা নিবিড় পর্যবেক্ষণ ব্যতীত সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কখনো কখনো কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র বা লাইফ সাপোর্টের প্রয়োজন হয় যেটা শুধুমাত্র আইসিইউতেই দেখা যায়। তাছাড়াও কিছু কিছু জীবনরক্ষাকারী ওষুধ আছে, যা প্রয়োগের জন্যও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের প্রয়োজন হয়।

বিগত কয়েক বছরে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা (ডেঙ্গু শক সিনড্রোম) এবং মহামারিকালীন কোভিড ইনফেকশন পরবর্তী জটিলতা এমআইএসসি (মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন) বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে, হার্টের শিরা ফুলে যাওয়া ও হার্টের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, এসব শিশুদের চিকিৎসায় প্রয়োজন নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও পরিচর্যা, যা শুধুমাত্র আইসিইউতেই সম্ভব। শিশু বিভাগের ক্রমবর্ধমান বিকাশের ফলে শিশুদের ক্যান্সার চিকিৎসায় বোনমেরো ট্রান্সপ্ল্যান্ট, দীর্ঘমেয়াদি কিড ফেইলিউরের রোগীদের কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট, জটিল সার্জারি পরবর্তী সঠিক পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র/পেডিয়াট্রিক আইসিইউ’র গুরুত্ব অপরিসীম।

তাছাড়া ২০৩০ সাল নাগাদ এসডিজি’র (সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস) মাইলফলকে পৌঁছানোর লক্ষ্যে শিশু ইমার্জেন্সি ও শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন খুবই জরুরি, যা শিশু মৃত্যুহার কমাতে বিশেষ সহায়ক হবে। বাংলাদেশে পেডিয়াট্রিক আইসিইউ/শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের সংখ্যা সরকারি-বেসরকারি দুই খাতেই অপ্রতুল। পাশাপাশি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যাও কম। দেশের যেসব বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স, উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে, তাদের মধ্যে এভারকেয়ার হসপিটাল অন্যতম। শিশুদের জীবন রক্ষার্থে অভিজ্ঞ চিকিৎসক, দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীদের সার্বিক উপস্থিতি-পরিচর্যা এবং ইমার্জেন্সি চিকিৎসা প্রদানে পেডিয়াট্রিক আইসিইউ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডা. নুরুন নাহার

কনসালটেন্ট-পেডিয়াট্রিক আইসিইউ, এভারকেয়ার হসপিটাল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে